ভক্তগণের স্ব-স্ব ইষ্টমন্ত্রানুসারে চৈতন্যদেবকে তত্তন্মূর্তিতে
দর্শন এবং তদ্দ্বারা মহাপ্রভুর নিজ অবতারিত্ব-স্থাপন—
যে মন্ত্রে যে বৈষ্ণব ইষ্ট ধ্যান করে।
সেই মত দেখয়ে ঠাকুর বিশ্বম্ভরে ॥
শুদ্ধভক্তগণ শ্রীচৈতন্যদেবের কৃষ্ণ-কীর্তন-লীলা সর্বদাই দর্শন করেন। প্রপঞ্চে জড়ভোগমত্ত জনগণের চৈতন্যলীলা-দর্শনে কোনই শক্তি হয় না॥২৮৫॥
লীলাময় বিষ্ণবস্তু নানামূর্তিতে নিত্যলীলা বিস্তার করিয়া মহাবৈকুণ্ঠে অবস্থিত । তত্তল্লীলোচিত দর্শন-জন্য মনন ধর্ম হইতে ত্রাণাকাঙ্ক্ষী জনগণ তত্তন্মন্ত্রে ভগবানের তত্ল্লীলা দর্শন করেন। শ্রীচৈতন্যদেব বিভিন্ন ভক্তের নিকট বিভিন্ন সেব্যবস্তুরূপে আবির্ভূত হন। “যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহম্’’—গীতার এই শ্লোকের প্রকাশ-কল্পে শ্রীগৌরসুন্দর বিভিন্ন শ্রেণীর ভক্তের নিকট লীলাময় বিষ্ণুর অধিষ্ঠান-সমূহ প্রদর্শন করেন। ইহা দ্বারা এরূপ মনে করিতে হইবে না যে, বিশ্বম্ভর বিষ্ণুবস্তু নহেন। বিষ্ণু ব্যতীত অন্যান্য দেবগণের মূর্তিদর্শনে তাঁহাকেও বিষ্ণুমূর্তি বুঝিতে হইবে না; এরূপ নহে। বিষ্ণু ব্যতীত অন্যান্য দেবমূর্তিতে পূর্ণতার অভাব। “ত্বং ভক্তিযোগপরিভাবিতহৃৎসরোজ আস্সে শ্রুতেক্ষিতপথো ননু নাথ পুংসাম্ ! যদ্যদ্ধিয়া ত উরুগায় বিভাবয়ন্তি তওদ্বপুঃ প্রণয়সে সদনুগ্রহায় ॥ ( ভাঃ ৩/৯/১১)। “অপি চৈবমেকে।’’ ( ব্রঃ সূঃ ৩/২/১৩)। “স্থানবিশেষাৎ প্রকাশাদিবৎ।’’ (—ব্রঃ সূঃ ৩/২/৩৫)। “যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহম্।’’ (—গীঃ ৪/১১)। “যদৃশো ভাবিতস্ত্বীশস্তাদৃশো জীব আভজেৎ।’’ (—তন্ত্রসারে)। “এই শ্লোকের অর্থ সংক্ষেপের সার। ভক্তের ইচ্ছায় প্রভুর সর্ব-অবতার ॥’’ ( —চৈত্র আঃ ৩/ ১১১)। “আমাকে ত’ যে যে ভক্ত ভিজে যেই ভাবে। তরে সে সে ভাবে ভজি, —এ মোর স্বভাবে ॥’’(চৈঃ চঃ আঃ ৪/১৯)। “অতএব শ্রীচৈতন্য গোসাঞি সর্ব-অবতার লীলা করি’ সবারে দেখাই॥ (চৈঃ চঃ আঃ ৫।১৩৩)।