Normal view
Book Lang.: বাংলা
English
संस्कृता वाक्
Translation

শ্লোক 418

Language: বাংলা
Language: English Translation
  • হেন উদ্ধতের যদি হেন ভক্তি হয়।
    না বুঝি কৃষ্ণের ইচ্ছা,—এ বা কিবা হয়

    গৌরের অবতার ও কীর্তন-মহিমা, (ত্রিদণ্ডি-গোস্বামী শ্রীপাদ প্রবোধানন্দ সরস্বতী-কৃত ‘শ্রীচৈতন্যচন্দ্রামৃত’-গ্রন্থে ১১১, ১২১, ১২৪, ১২৬, —১২৮, ১৩৩ ও ১৩৪ শ্লোক—)

    ‘ন যোগোন ধ্যানং ন চ জপতপস্ত্যাগনিয়মা ন বেদা নাচারঃ ক্ব নু বত নিষিদ্ধাদ্যুপরতিঃ।
    অকস্মাচ্চৈতন্যেঽবতরতি দয়া সারহৃদয়ে পুমর্থানাং মৌলিং পরমিহ মুদা লুণ্ঠতি জনঃ॥
    মহা কর্মস্রোতো নিপতিতমপি স্থৈর্যময়তে মহাপাষাণেভ্যোঽপ্যতিকঠিনমেতি দ্রবদশাম্‌।
    নটত্যুর্ধ্বং নিঃসাধনমপি মহাযোগমনসাং ভুবি শ্রীচৈতন্যেঽবতরতি মনশ্চিত্ৰবিভবে।
    স্ত্রীপুত্ৰাদিকথাং জহুর্বিষয়িণঃ শাস্ত্রপ্রবাদং বুধা যোগীন্দ্রা বিজহুর্মরুন্নিয়মজক্লেশং তপস্তাপসাঃ।
    জ্ঞানাভ্যাসবিধিং জহুশ্চ যতয়শ্চৈতন্যচন্দ্রে পরামাবিষুর্বতি ভক্তিযোগপদবী নৈবান্য আসীদ্‌রসঃ॥
    অভূদ্‌গেহে গেহে তুমুলহরিসঙ্কীর্তনরবো  বভৌ দেহে দেহে বিপুলপুলকাব্যতিকরঃ।
     অপি স্নেহে স্নেহে পরমমধুরোকর্ষপদবী দবীয়স্যাস্মায়াদপি জগতি গৌরেঽবতরতি॥
    অকস্মাদেবৈতদ্ভুবনমভিতঃ প্লাবিতমভূৎমহা-প্রেমাম্ভোধেঃ কিমপি রসবন্যাভিরখিলম্‌।
    অকস্মাচ্চাদৃষ্টাশ্রুতচর বিকারৈরলমভূচ্চমৎকারঃ কৃষ্ণে কনকরুচিরাঙ্গেহবরতি॥
     উদ্‌গৃহ্নন্তি সমস্তশাস্ত্রমভিতো দুর্বারগর্বায়িতা ধন্যম্মন্যধিয়শ্চ কর্মতপসাদ্যুচ্চাবচেষু স্থিতাঃ।
    দ্বিত্রাণ্যেব জপন্তি কেচন হরের্নামানি বামাশয়াঃ পূর্বং সম্প্রতি গৌরচন্দ্র উদিতে প্রেমাপি সাধারণঃ॥
    দেবে চৈতন্যনামন্যবতরতি সুরপ্রার্থ্যপাদাজ্বসেবে বিষ্বদ্রীচীঃ প্রবিস্তারয়তি সুমধুরপ্রেমপীযূষবীচীঃ।
    কো বালঃ কশ্চ বৃদ্ধঃ ক ইহ জড়মতিঃ কা বধূঃ কো বরাকঃ সর্বেষামৈকরস্যং কিমপি হরিপদে ভক্তিভাজাং বভূব॥
    সর্বে শঙ্করনারদাদয় ইহায়াতাঃ স্বয়ং শ্রীরপি প্রাপ্তা দেবহলায়ুধোঽপি মিলিতো জাতশ্চ তে বৃষ্ণয়ঃ।
    ভূয়ঃ কিঃ ব্রজবাসিনোঽপি প্রকটা গোপালগোপ্যাদয়ঃ পূর্ণে প্রেমরসেশ্বরেঽবতরতি শ্রীগৌরচন্দ্রে ভুবি॥
    ভৃত্যাঃ স্নিগ্ধা অতিসুমধুরপ্রোজ্বলোদারভাজস্তৎ পাদাজ্বদ্বিতয়সবিধে সর্ব এবাবতীর্ণাঃ।
    প্রাপুঃ পূর্বাধিকতর-মহা-প্রেমপীযূষলক্ষ্মীং স্বপ্ৰেমাণং বিতরতি জগত্যদ্ভুতং হেমগৌরে॥
    হসন্ত্যুচ্চৈরুচ্চৈরঽহ কুলবধ্বোঽপি পরিতো দ্রবীভাবং গচ্ছন্ত্যপি কুবিষয় গ্রাবঘটিতাঃ।
    তিরস্কুবন্ত্যজ্ঞা অপি সকলশাস্ত্রজ্ঞসমিতিং ক্ষিতৌ শ্রীচৈতন্যেঽদ্ভুতমহিমসারেহবতরতি॥
    প্রায়শ্চৈতন্যমাসীদপি সকলবিদাং নেহ পূর্বং যদেষাং খর্বা সর্বার্থসারেঽপ্যকৃত নহি পদং কুণ্ঠিতা বুদ্ধিবৃত্তিঃ। গম্ভীরোদারভাবোজ্জ্বলরসমধুরপ্রেমভক্তিপ্রবেশঃ কেষাং নাসীদিদানীং জগতি করুণয়া গৌরচন্দ্রেঽবতীর্ণে॥
     * * *সর্বজ্ঞৈমুনিপুঙ্গবৈঃ প্রবিততে তত্তন্মতে যুক্তিভিঃ পূর্বং নৈকতরত্র কোঽপি সুদৃঢ়ং বিশ্বস্ত আসীজ্জনঃ। সম্প্রত্যপ্রতিমপ্রভাব উদিতে গৌরাঙ্গচন্দ্রে পুনঃ শ্রুত্যর্থো হরিভক্তিরেব পরমঃ কৈর্বা ন নির্ধার্যতে॥
     * * * অতিপুণ্যৈরতিসুকৃতৈঃ কৃতাৰ্থীকৃতঃ কোঽপি পূর্বৈঃ। এবং কৈরপি ন কৃতং যৎ প্রেমাব্ধৌ নিমজ্জিতং বিশ্বম্॥
     ধর্মে নিষ্ঠাং দধদনুপমাং বিষ্ণুভক্তিং গরিষ্ঠাংসংবিভ্রাণো দধদিহ হি হৃত্তিষ্ঠতীবাশ্মসারম্‌।
    নীচো গোঘ্নাদপি জগদহো প্লাবয়ত্যশ্রুপুরৈঃ কো বা জানাত্যহহ গহনং হেমগৌরাঙ্গরঙ্গম্‌।
    ক্বচিৎ কৃষ্ণাবেশান্নটতি বহুভঙ্গীমভিনয়ন্ ক্বচিদ্‌রাধাবিষ্টো হরিহরিহরী ত্যার্তিরুদিতঃ।
    ক্বচিদরিঙ্গন্‌ বালঃ ক্বচিদপি চ গোপালচরিতো জগদ্‌গৌরো বিস্মাপয়তি বহুগম্ভীরমহিমা॥
     * * * দেবা দুন্দুভিবাদনং বিদধিরে গন্ধর্বমুখ্যা জগুঃ সিদ্ধাঃ সন্ততপুষ্পবৃষ্টিভিরিমাং পৃথ্বীং সমাচ্ছাদয়ন্‌।
    দিব্যস্তোত্রপরা মহর্ষিনিবহাঃ প্রীত্যোপতস্থূর্নিজপ্রেমোন্মাদিনি তাণ্ডবং রচয়তি শ্রীগৌরচন্দ্রে ভুবি॥
    ক্ষণং হসতি রোদিতি ক্ষণমথ ক্ষণং মূৰ্ছতি ক্ষণং লুঠতি ধাবতি ক্ষণমথ ক্ষণং নৃত্যতি।
    ক্ষণং শ্বসিতি মুঞ্চতি ক্ষণমুদার হাহা রুতিং মহাপ্রণয়সীধুনা বিরতীহ গৌরো হরিঃ॥”

    অর্থাৎ ‘পরম-দয়ালু শ্রীচৈতন্যদেব ইহ-জগতে অকস্মাৎ অবতীর্ণ হইলে যোগ, ধ্যান, জপ, তপ, ত্যাগ, নিয়ম বেদাধ্যয়ন, সদাচার এই সকল কিছুই ছিল না; এমন কি, যাহার পাপাদি-কর্মে নিবৃত্তিও নাই, সেইরূপ ব্যক্তিও পরম-হর্ষে পুরুষার্থ-শিরোমণি পরমপ্রেম লুণ্ঠন করিয়াছিল। আশ্চর্যবিভবশালী শ্রীচৈতন্যদেব ভূমণ্ডলে অবতীর্ণ হইলে, কর্মিকুলের মন মহাকর্ম-প্রবাহে নিপতিত থাকিলেও, প্রেম লাভ করিয়া স্থৈর্যপ্রাপ্ত হইল এবং মহাপাষাণ হইতেও অতিশয় কঠিন মনও ভক্তিরসে দ্রব্যতা প্রাপ্ত হইল। মহাযোগাদি-সাধনে চিত্তবৃত্তিবিশিষ্ট ব্যক্তিগণেরও মন যোগাদি অনিত্য-সাধন হইতে বিরত হইয়া উর্ধ্বে নৃত্য অর্থাৎ অধোক্ষজ চিদ্বিলাসরাজ্যে প্রেম আস্বাদন করিয়াছিল। শ্রীচৈতন্যচন্দ্র পরভক্তিযোগ-পদবী আবিষ্কার করিলে প্রাকৃত-বিষয়রস-মগ্ন ব্যক্তিগণ স্ত্রী-পুত্রাদির কথা পরিত্যাগ করিয়াছিলেন, পণ্ডিতগণ শাস্ত্রসম্বন্ধী বাদ বিসম্বাদ ত্যাগ করিয়াছিলেন, যোগিশ্রেষ্ঠগণ প্রাণবায়ুনিরোধার্থ সাধন-ক্লেশ সর্বতোভাবে বর্জন করিয়াছিলেন, তপস্বিগণ তাঁহাদের তপস্যা ত্যাগ করিয়াছিলেন, জ্ঞানসন্ন্যাসিগণ নির্ভেদব্রহ্মানুসন্ধান পরিত্যাগ করিয়াছিলেন; তখন ভক্তিরস ব্যতীত অন্য কোনপ্রকার রস আর জগতে দৃষ্ট হয় নাই। শ্রীগৌরসুন্দর জগতে অবতীর্ণ হইলে গৃহে গৃহে তুমুল হরিসঙ্কীর্তনের রোল উত্থিত হইয়াছিল, দেহে দেহে পরিপুষ্ট পুলকাশ্রু-কদম্ব শোভা পাইয়াছিল, প্রেমভক্তির গাঢ়ত্বের উত্তরোত্তর উৎকর্ষে শ্রুতির অগোচর পরমমধুরা শ্রেষ্ঠা পদবীও প্রকাশিত হইয়াছিল। সর্বচিত্তাকর্ষক স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মনোহর কনক-কান্তি ধারণ-পূর্বক অবতীর্ণ হইলে মহা-প্রেম বারিধির রসবন্যায় এই নিখিলজগৎ অকস্মাৎ সর্বতোভাবে প্লাবিত এবং অদৃষ্টপূর্ব ও অশ্রুত-চর প্রেমবিকারদ্বারা অত্যন্ত চমৎকৃত হইয়াছিল। কোন কোন ব্যক্তি দুর্নিবার গর্বে গর্বিত হইয়া সমগ্ৰশাস্ত্র সর্বতোভাবে সংগ্রহ করিতেন, অর্থাৎ ‘আমি সর্বশাস্ত্রবিৎ, আমা-অপেক্ষা শ্রেষ্ঠব্যক্তি কেহ নাই’— এইরূপ মনে করিতেন। কেহ কেহ বা নিজেই নিজকে কৃতার্থ মনে করিতেন, সেই সকল কৃতার্থম্মন্য এবং স্মৃতিশাস্ত্রোক্ত নিত্যনৈমিত্তিককর্ম, তথা তপস্যা, সাংখ্য-যোগাদি-মার্গে উচ্চনীচভাবে অবস্থিত ব্যক্তিগণের কেহ কেহ দুই তিন বার মাত্র হরির নামাবলী জপ করিতেন, তথাপি তাঁহাদের চিত্ত কৈতবপূর্ণই ছিল। পূর্বের অবস্থা এইপ্রকার, কিন্তু এখন গৌরচন্দ্র অবতীর্ণ হইলে ‘প্রেম’ও সাধারণ হইয়া পড়িল অর্থাৎ আপামর সর্বসাধারণেই প্রেম প্রাপ্ত হইল। সুরগণ যাঁহার পাদপদ্ম সেবা বাঞ্ছা করেন, সেই লীলাময়-পুরুষ শ্রীচৈতন্যদেব প্রপঞ্চে অবতীর্ণ হইয়া বিশ্বব্যাপিনী সুমধুর প্রেমপীযূষ-লহরী (সর্বত্র) প্রকৃষ্টরূপে বিস্তার করিলে, কি বালক, কি বৃদ্ধ, কি স্ত্রী, কি জড়মতি, কি শোচনীয় নীচব্যক্তি—এই সংসারে সকলেরই ভক্তিলাভে যোগ্যতা এবং শ্রীহরির চরণে কোনও এক অপূর্ব চমৎকারময়-অদ্বয়জ্ঞানরস উদিত হইয়াছিল। প্রেমরস-রসিকশিরোমণি স্বয়ং ভগবান্ গৌরচন্দ্র ভূমণ্ডলে অবতীর্ণ হইলে, শঙ্কর নারদাদি সকলেই (অদ্বৈত, শ্রীবাস প্রভৃতি ভক্তরূপে) আগমন করিয়াছিলেন। স্বয়ং লক্ষ্মীও (শ্রীলক্ষ্মীপ্রিয়া ও বিষ্ণুপ্রিয়া-রূপে) আবির্ভূত হইয়াছিলেন। স্বয়ংভগবান্ হইতে অভিন্ন তদীয় প্রকাশ-স্বরূপ বলদেব (পাষণ্ডদলনবানা নিত্যানন্দরায়রূপে) বিরাজ করিতেছিলেন। যাদবগণও (শচী, জগন্নাথ প্রভৃতিতে) প্রকাশিত হইয়াছিলেন, আর অধিক কি বলিব, নন্দাদি ব্রজবাসিগণ, সুবলপ্রমুখ সখাসকল, গোপী-প্রমুখ শক্তিগণ, রক্তক, চিত্রক প্রভৃতি দাসগণ, অর্থাৎ কৃষ্ণলীলার নিত্যসিদ্ধ পার্ষদগণ সকলেই গৌরলীলায় অবতীর্ণ হইয়াছিলেন। তপ্তকাঞ্চনদ্যুতি গৌরসুন্দর পৃথিবীতে স্বীয় অলৌকিক প্রেম বিতরণ করিলে, দাস, সখা ও ঐশ্বর্যজ্ঞানহীন কেবল মধুর-রসের নিত্যসিদ্ধ-সেবিকা প্রেয়সীবর্গ, ইঁহারা সকলেই গৌরপাদপদ্ম-সন্নিধানে অবতীর্ণ হইয়া পূর্বের (কৃষ্ণলীলার) প্রেমাস্বাদন অপেক্ষাও মহাপ্রেমামৃত-সম্পত্তি লাভ করিয়াছেন। অতি অলৌকিক পরমমহিমান্বিত শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য পৃথিবীতে অবতীর্ণ হইলে কুলবধূগণও (লজ্জা পরিত্যাগপূর্বক কৃষ্ণপ্রেমে) অতি উচ্চৈঃস্বরে হাস্য করিত, ইন্দ্রিয়তর্পণপর কুবিষয়-পাষাণ-নির্মিত কঠিন হৃদয়ও সর্বতোভাবে দ্রবীভূত হইয়াছিল, তত্ত্বজ্ঞানহীন অজ্ঞ ব্যক্তিগণও (চৈতন্য কৃপায় তত্ত্বজ্ঞান লাভ করিয়া) সকল শাস্ত্রজ্ঞ সমাজকেও ধিক্কারপ্রদান করিয়াছিল (অর্থাৎ অপর-বিদ্যানিপুণ শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতাভিমানীদিগের শাস্ত্রজ্ঞানে ধিক্কার প্রদান করিয়াছিল)। চৈতন্যাবির্ভাবের পূর্বে এই প্রপঞ্চে সর্বশাস্ত্রবিৎ পণ্ডিতাভিমানীদিগেরও কৃষ্ণসেবারূপ চেতনবৃত্তি আচ্ছাদিতপ্রায় হইয়াছিল। হঁহারা সর্বপুরুষার্থ-শিরোমণি কৃষ্ণপ্রেম লক্ষ্য করেন নাই, যেহেতু ইঁহাদের বুদ্ধিবৃত্তি অতি সামান্যা ও সন্দেহপ্রবণা; কিন্তু সম্প্রতি গৌরচন্দ্ৰ কৃপাপূর্বক জগতে উদিত হওয়ায় সুদুর্বোধ, পরমচমৎকার বিভাব-অনুভাবাদি সামগ্রীপুষ্টা উন্নতোজ্জ্বল মধুর-রসময়ী প্রেমভক্তিতে কাহাদেরই বা প্রবেশ না হইয়াছে? * * * সর্বজ্ঞ মুনিশ্রেষ্ঠগণ তাহাদের নিজ-নিজ-মত যুক্তিতর্কদ্বারা প্রকৃষ্টরূপে বিস্তৃত করিলেও কোন ব্যক্তিই পূর্বে সেই সকল পক্ষপাতিনী যুক্তিতে সুদৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন না। সম্প্রতি অপ্রতিম প্রভাবশালী শ্রীগৌরচন্দ্র উদিত হইলে পুনরায় একমাত্র হরিভক্তিই যে বেদপ্রতিপাদ্য পরমার্থ, তাহা কে-ই বা নিশ্চয় না করিয়াছে? * * * বিশেষ সদাচারী ও পরমধার্মিক প্রাচীন-মহাপুরুষগণের দ্বারা কোন কোন ব্যক্তি বৈকুণ্ঠাদি-লোক প্রাপ্ত হইয়া কৃতকৃতার্থ হইয়াছেন, কিন্তু শ্রীচৈতন্যচন্দ্র যেরূপ সমগ্র বিশ্বকে প্রেম-সমুদ্রে নিমজ্জিত করিয়াছেন, পূর্বে আর কেহই এরূপ করেন নাই। ধর্ম-বিষয়িণী অতুলনীয়া নিষ্ঠা এবং শ্রেষ্ঠ-ভক্তি সম্যরূপে আশ্রয় করিয়াও লোকে লৌহের ন্যায় সুকঠিন হৃদয় ধারণপূর্বক পৃথিবীতে অবস্থান করে; (কিন্তু শ্রীগৌরহরির কৃপায়) অহো! গোঘাতী অপেক্ষাও পাপীয়ান্‌ ব্যক্তি (পাপপ্রবৃত্তি হইতে সর্বতোভাবে মুক্ত হইয়া) অশ্রুপ্রবাহের দ্বারা বিশ্ব প্লাবিত করিয়াছে। অহো! কেইবা কাঞ্চনকান্তি শ্রীগৌরাঙ্গসুন্দরের দুর্বিগাহ রঙ্গ জানিতে পারে? বিপুল-দুরবগাহপ্রভাবে শ্রীগৌরসুন্দর সমগ্র বিশ্বকে বিস্ময়াবিষ্ট করিয়াছেন। শ্রীকৃষ্ণাবেশ-হেতু কখনও বালকৃষ্ণলীলা প্রকাশ করিয়া জানু দ্বারা চঙ্‌ক্ৰমণ করিতেছেন, কখনও বা গো-পালকের চরিত্র প্রকাশ করিয়া, কখনও বা বহু ভঙ্গী অভিনয় করিয়া নৃত্য করিতেছেন, আবার কখনও শ্রীকৃষ্ণবিরহেশ্রীরাধার ভাবে আবিষ্ট হইয়া হরি’! হরি’!! হরি’!!!—এইরূপ বিরহপীড়াজনিত আর্তিসহকারে রোদন করিতেন। * * * নিজপ্রেম উন্মত্ত হইয়া শ্রীগৌরসুন্দর পৃথিবীতে উদ্দণ্ড-নৃত্য আরম্ভ করিলে দেবগণ দুন্দুভি বাদন করিয়াছিলেন, প্রধান প্রধান গন্ধর্বগণ সঙ্কীর্তন আরম্ভ করিয়াছিলেন, সিদ্ধগণ নিরন্তর পুষ্পবৃষ্টিদ্বারা ভূমণ্ডল সমাচ্ছন্ন করিয়াছিলেন। মনোহর স্তোত্রপাঠ-কুশল মহর্ষিবৃন্দ প্রীতির সহিত স্তব করিয়াছিলেন। শ্রীগৌরহরি মহাভাবান্ত-রসে মগ্ন হইয়া কখনও হাস্য করিতেন, কখনও রোদন করিতেন, কখনও মুর্ছিত হইতেন, কখনও ভূমিতে লুণ্ঠিত হইতেন, কখনও দ্রুত গমন করিতেন, আবার কখনও দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিতেন; কখনও বা ‘হা হ’ এইরূপ মহৎ শব্দ করিতেন; —এইরূপ নানাভাবে প্রপঞ্চে বিহার করিয়াছিলেন ।

Page execution time: 0.0546469688416 sec