‘পরবিদ্যা-বধূজীবন’ কৃষ্ণসংকীর্তনারম্ভেই বিদ্যাবিলাস-লীলার পুষ্টি—
এইমতে পরিপূর্ণ বিদ্যার বিলাস।
সংকীর্তন-আরম্ভের হইল প্রকাশ॥
প্রভুর কৃষ্ণ-সংকীর্তনের আরম্ভমুখেই তাহার বিদ্যা-বিলাসের পরিপূর্ণতা প্রকাশিত হইয়াছিল। ‘সংকীর্তন’-শব্দে বহুলোক মিলিয়া যে শ্রীহরির নাম, রূপ, গুণ, পরিকরবৈশিষ্ট্য ও লীলার কীর্তন এবং তাদৃশ কীর্তনকালে সেবোন্মুখ জনগণের তত্তদ্বিষয়ের ‘শ্রবণ’কেও লক্ষ্য করে। ইহাই সংকীর্তনের বৈশিষ্ট্য। কৃষ্ণের নাম, রূপ, গুণ, পরিকরবৈশিষ্ট্য ও লীলা সম্যগ্ভাবে অর্থাৎ নিরপরাধে কীর্তিত না হইলে অনাদি-বহির্মুখ কৃষ্ণবিস্মৃত জীবের প্রাপঞ্চিক-বিষয়ে অভিনিবেশ-ত্যাগের আর আদৌ কোন সম্ভাবনা থাকে না। যদি পরলোকের অর্থাৎ পরব্যোম বা পূর্ণ-চেতন-রাজ্যের চিন্ময়ী কৃষ্ণকথা ইন্দ্রিয়তর্পণপর মানবগণের নিকট উপস্থিত না হয়, তাহা হইলে মনঃ-কল্পিত বিবিধ ইন্দ্রিয়-তর্পণপর প্রচেষ্টাই ধর্মের নামে প্রচলিত হইয়া জগজ্জঞ্জাল উপস্থাপিত করিবে। অমন্দোদয়-দয়া-সিন্ধু মহাবদান্য শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যদেব অমন্দোদয়দয়ার ও অহৈতুকী কৃপার বশবর্তী হইয়া সমগ্র অচৈতন্য জগদ্বাসীকে তাহাদের অবিদ্যা-জনিত জড়াভিনিবেশ হইতে রক্ষা করিবার মানসে অর্থাৎ অচৈতন্য স্থাবর-জঙ্গমের হৃদয়ে শুদ্ধ চৈতন্যময়ী কৃষ্ণসেবা-প্রবৃত্তির উদয় করাইবার জন্য, কৃষ্ণসেবা-পরাকাষ্ঠা-লাভই যে কৃষ্ণসেবানুগা পরবিদ্যার চরম ফল, তাহা প্রচার করিয়াছেন।