অঘ-বক-পূতনারে যে কৈলা নোচন।
ভজ ভজ সেই নন্দনন্দন-চরণ ॥
অঘাসুরের মোচন,—(ভাঃ ১০/১২/৩৮-৩৯ শ্লোকে পরীক্ষিতের প্রতি শ্ৰীশুকোক্তি—)
“নৈতদ্বিচিত্ৰং মনুজার্ভমায়িনঃ পরাবরাণাং পরমস্য বেধসঃ।
অঘাঽপি যৎস্পর্শনধৌতপাতকঃ প্রাপাত্মসাম্যন্ত্বসতাং সুদুর্লভম্॥
সকৃদ্যদঙ্গপ্রতিমান্তরাহিতা মনোময়ী ভাগবতীং দদৌ গতিম্।
স এব নিত্যাত্মসুখানুভূত্যভিব্যুদস্তমায়োঽন্তৰ্গতো হি কিং পুনঃ॥”
অর্থাৎ “হে রাজন! অঘাসুরও যে শ্রীকৃষ্ণস্পর্শমাত্রেই বিধূতপাপ হইয়া অসজ্জনের সুদুর্লভ সারূপ্য-মোক্ষ লাভ করিল, ইহা স্বরূপশক্তিদ্বারা নর-বালকরূপি-লীলাময়, মায়াধীশ মহেশ্বর, সকলের পরমবিধাতা পরাবর ভগবান শ্রীহরির পক্ষে আশ্চর্য নহে। যাঁহার শ্রীমূর্তির কেবল মনোময়ী প্রতিমা একবার মাত্র অন্তরে গাঢ়ভাবে আহিত হইয়াই প্রহ্লাদাদি-ভক্তগণকে ভাগবতী গতি প্রদান করিয়াছিল, সেই ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ সাক্ষাৎ স্বয়ং অন্তরে প্রবিষ্ট হইয়া যে অঘাসুরকেও ভাগবতী গতি দিবেন, তাহাতে কি আবার বিস্ময় আছে? ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণের স্বীয় অন্তরঙ্গ নিত্য আত্মসুখানুভব দ্বারা বহিরঙ্গা মায়া সর্বদাই ব্যুদস্তা অর্থাৎ পশ্চাদ্দেশে ছায়ারূপে বিলজ্জিতভাবে পরাভূতা হইয়া অবস্থিত।’
বকী পূতনার মোচন,—(ভাঃ ১০/৬/৩৫ ও ৩৮ শ্লোকে পরীক্ষিতের প্রতি শ্ৰীশুকোক্তি—)
“পুতনা লোকবালঘ্নী রাক্ষসী রুধিরাশনা।
জিঘাংসয়াপি হরয়ে স্তনং দত্ত্বাপ সদগতিম্॥”
অর্থাৎ ‘হে রাজন! বকী পূতনা সকল লোকেরই শিশুঘাতিনী এবং রুধিরাশনা রাক্ষসী ছিল, কিন্তু সে হত্যা করিবার বাসনা করিয়াও ভগবান শ্রীহরিকে স্তন দান করিয়া সদগতি প্রাপ্ত হইল।’
“যাতুধান্যপি সা স্বর্গমবাপ জননীগতিম্।
কৃষ্ণভুক্তস্তনক্ষীরাঃ কিমু গাবো নু মাতরঃ॥”
অর্থাৎ ‘ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যাঁহার স্তন পান করিলেন, সেই রাক্ষসীও যখন জননীর গতি বৈকুণ্ঠ লাভ করিল, তখন তিনি যে সকল গো ও গোপীর স্তনদুগ্ধ পান করিয়াছেন, তাহারা যে মাতৃসদৃশী সদগতি লাভ করিবেন, তাহাতে আর কথা কি?
‘অঘ-বক-পূতনারে যে কৈলা মোচন’,—অর্থাৎ যিনি ‘হতারি-গতিদায়ক’; যথা, ভঃ রঃ সিঃ—দঃ বিঃ ১ম লঃ—
“পরাভবং ফেনিলবক্ত্রতাঞ্চ বন্ধঞ্চ ভীতিঞ্চ মৃতিঞ্চ কৃত্বা।
পবর্গদাতাপি শিখণ্ডমৌলে ত্বং শাত্ৰবাণামপবর্গদোঽসি॥”
অর্থাৎ ‘হে শিখিপুচ্ছচূড় কৃষ্ণ! তুমি তোমার শত্রুবর্গকে পরাজয়, ফেনযুক্ত আনন, বন্ধন, ভয় ও মৃত্যু—এই প-বর্গ (পঞ্চবর্গ পূর্ব দণ্ড) প্রদান করিলেও পরিণামে কিন্তু তাহাদিগকে অপবর্গই (মুক্তিই) প্রদান করিয়াছ।’
কৃষ্ণকর্তৃক বক ও অঘ-বধ —ভাঃ ১০ম স্কঃ ১১শ অঃ ৪৭-৫৩ এবং ১২শ অঃ ১৩-৩৫ সংখ্যা দ্রষ্টব্য।