ধাতু-সংজ্ঞা—কৃষ্ণশক্তি বল্লভ সবার।
দেখি,—ইহা দূষুক,—আছয়ে শক্তি কার্? ॥
যম,— ধর্মের অধিষ্ঠাতৃ-দেব, ধর্মরাজ।
লক্ষ্মী,—ধন, শ্রী, শোভা বা সম্পদের অধিষ্ঠাত্রী দেবী।
বচনে,— কৃপা বা অনুগ্রহ প্রকাশ করেন।
ধাতু,—প্রাণ, জীবন, চৈতন্য, কৃষ্ণের পরশক্তির অণ্বংশ।
সর্বদেহে—ভক্তি এবং ‘ধাতু’-সংজ্ঞা—সবার,—আদি ৭ম অঃ ৫৪-৫৫ সংখ্যা দ্রষ্টব্য।
(ভাঃ ১১/১৪/৫০-৫৭ শ্লোকে শ্রীপরীক্ষিতের প্রতি শ্ৰীশুকোক্তি—)
“সর্বেষামপি ভূতানাং নৃপ স্বাত্মৈব বল্লভঃ।
ইতরেঽপত্যবিত্তাদ্যাস্তদ্বল্লভতয়ৈব হি॥
তদ্রাজেন্দ্র যথা স্নেহঃ স্বস্বকাত্মনি দেহিনাম্।
ন তথা মমতালম্বি পুত্র বিত্তগৃহাদিযু॥
দেহাত্মবাদিনাং পুংসামপি রাজন্যসত্তম।
যথা দেহঃ প্রিয়তমস্তথা নহ্যনু যে চ তম্॥
দেহোঽপি মমতাভাক্ চেত্তর্হ্যসৌ নাত্মবৎ প্রিয়ঃ।
যর্জ্জ্বীর্যত্যপি দেহেঽস্মিন্ জীবিতাশা বলীয়সী॥
তস্মাৎ প্রিয়তমঃ স্বাত্মা সর্বেষামপি দেহিনাম্।
তদর্থমেব সকলং জগদেতচ্চরাচরম্॥
কৃষ্ণমেনমবেহি ত্বমাত্মানমখিলাত্মনাম্।
জগদ্ধিতায় সোঽপ্যত্র দেহীবাভাতি মায়য়া॥
বস্তুতো জানতামত্র কৃষ্ণং স্থাস্নূচরিষ্ণু চ।
ভগবদ্রূপমখিলং নাদ্যদ্বস্ত্বিহ কিঞ্চন॥
সর্বেষামপি বস্তূনাং ভাবার্থো ভবতি স্থিতঃ।
তস্যাপি ভগবান্ কৃষ্ণঃ কিমতদ্বস্তু রূপ্যতাম্॥”
অর্থাৎ “হে রাজন্! সকল প্রাণীর আত্মাই ‘পরম-প্রিয়’; অপত্য-বিত্তাদি অন্যান্য-বস্তু আত্মার প্রিয় বলিয়াই ‘প্রিয়তর’ হইয়া থাকে। হে রাজেন্দ্র! এই কারণেই দেহিগণের স্ব-স্ব-অহঙ্কারাস্পদ দেহে যেরূপ স্নেহ হয়, মমতালম্বন পুত্র-বিত্তগৃহাদিতে তদ্রূপ হয় না। যে-সকল পুরুষ দেহাত্মবাদী, তাহাদের দেহ যেরূপ প্রিয়, দেহ-সম্পর্কিত পুত্রাদি তদ্রূপ প্রিয় নহে। কিন্তু যদ্যপি দেহ মমতাভাজন, তথাপি তাহা আত্মবৎ প্রিয় হইতে পারে ন; যেহেতু দেহ জীর্ণ হইয়া মৃত্যু আসন্ন হইলেও জীবিতাশা বলবতী থাকে। অতএব সকলদেহীর আত্মাই প্রিয়তম, আত্মার নিমিত্তই চরাচর সকল জগৎ প্রিয় হইয়া থাকে। হে রাজন! তুমি ঐ শ্রীকৃষ্ণকে অখিল দেহীর ‘আত্মা’ বলিয়া জান, তিনি জগতের হিতার্থ স্বরূপ-শক্তি চিন্ময়ী মায়া-দ্বারা এখানে দেহীর ন্যায় প্রকাশ পাইতেছেন। বস্তুতঃ যে-সকল পুরুষ সর্ব-জগতের কারণরূপে শ্রীকৃষ্ণকে জানেন তাহাদের সমক্ষে স্থাবর-জঙ্গম সমুদয় জগৎ ভগবদ্রূপে প্রকাশ পায়; তাঁহারা নিশ্চয় জানেন যে, তদ্ব্যতীত অন্যকোন বস্তুই নাই। হে রাজন্! যাবতীয় বস্তুর পরম অর্থ তাহাদের কারণেই অবস্থিত; ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ সেই সমস্ত কারণেরও কারণ। অতএব শ্রীকৃষ্ণ ব্যতীত অন্য বস্তু কি, তাহা নিরূপণ কর।”