শিষ্যবর্গ বলে,—“এবে কেমত বাখান’?”
প্রভু বলে,—“যেন হয় শাস্ত্রের প্রমাণ॥
সম্যক্ আম্নায়,—“আমনতি উপদিশতি বিষ্ণোঃ পরমং পদ; আন্মায়তে সম্যগভ্যস্যতে মুনিভিরসৌ, আম্নায়তে উপদিশ্যতে পরধর্মোঽনেনেতি আম্নায় ‘বেদঃ”; সমাম্নায়।ভাঃ ১০/৪৭/৩৩ শ্লোকে সমাম্নায়’-শব্দে শ্রীধরস্বামিপাদকৃত টীকায়—“সমাম্নায়ো বেদঃ”।
(গীতায় ১৫।১৫ শ্লোকে অর্জুনের প্রতি শ্রীকৃষ্ণোক্তি)
“সর্বস্য চাহং হৃদি সন্নিবিষ্টো মত্তঃ স্মৃতিজ্ঞানমপোহনঞ্চ।
বেদৈশ্চ সর্বৈরহমেব বেদ্যো বেদান্তকৃদ্বেদবিদেব চাহম্॥”
অর্থাৎ ‘আমিই সর্বজীবের হৃদয়ে ঈশ্বররূপে অবস্থিত; আমা-হইতেই জীবের কর্মফলানুসারে স্মৃতিজ্ঞান ও স্মৃতিজ্ঞানেই ভ্রংশ ঘটে; আমিই সর্ববেদবেদ্য ভগবান্, সমস্ত বেদান্ত-কর্তা এবং বেদান্ত-বিৎ।
(ভাঃ ১২/১৩/১ শ্লোকে শৌনকাদি ঋষিগণের প্রতি শ্ৰীসূত-গোস্বামীর উক্তি—)
“যং ব্রহ্মা বরুণেন্দ্ররুদ্রমরুতঃ স্তন্বন্তি দিব্যৈঃ স্তবৈর্বেদৈঃ সাঙ্গপদক্রমোপনিষদৈর্গায়ন্তি যং সামগাঃ।
ধ্যানাবস্থিত-তদগতেন মনসা পশ্যন্তি যং যোগিনো যস্যান্তং ন বিদুঃ সুরাসুরগণা দেবায় তস্মৈ নমঃ॥”
অর্থাৎ ‘ব্রহ্মা, বরুণ, ইন্দ্র, রুদ্র ও মরুঙ্গণ দিব্যস্তবে যাঁহাকে স্তব করেন, অঙ্গ, পদক্রম ও উপনিষদের সহিত বেদসকল যাঁহার গান করিয়া থাকেন, সমাধি অবস্থায় তত-চিত্ত হইয়া যোগিগণ যাঁহাকে হৃদয়ে দর্শন করেন এবং সুরাসুরগণ যাঁহার অন্ত জানেন না, সেই পরম-দেব শ্রীকৃষ্ণকে নমস্কার করি।
(ভাঃ ১১/২১/ ৪২-৪৩ শ্লোকে উদ্ধবের প্রতি শ্রীকৃষ্ণের উক্তি—)
“কিং বিধত্তে কিমাচষ্টে কিমনূদ্য বিকল্পয়েৎ।
ইত্যস্যা হৃদয়ং লোকে নান্যো মদ্বেদ কশ্চন।
মাং বিধত্তেঽভিধত্তে মাং বিকল্প্যাপোহ্যতে ত্বহম্।
এতাবান্ সর্ববেদার্থঃ শব্দ আস্থায় মাং ভিদাম্।
মায়ামাত্রমনূদ্যান্তে প্রতিষিধ্য প্রসীদতি॥”
অর্থাৎ ‘কর্মকাণ্ডে বিধিবাক্যসমূহদ্বারা শ্রুতি কাহাকে বিধান করেন, দেবতাকাণ্ডে মন্ত্রবাক্যসমূহদ্বারা শ্রুতি কাহাকে প্রকাশ করেন এবং পরিণামে নিষেধ করিবার উদ্দেশে কোন্ বিষয়েরই বা প্রস্তাব করেন?—ইত্যাদি বেদবাণীর তাৎপর্য আমি-ব্যতীত আর অন্য কেহই জানে না। এ বিষয়ে অত্যন্ত নিগূঢ় হইলেও এক্ষণে তোমার প্রতি কৃপা করিয়া বলিতেছি যে, সেই বেদবাণী কর্মকাণ্ডে যজ্ঞরূপে আমাকেইবিধান করে, দেবতাকাণ্ডে তত্তদূদেবতা-রূপে আমাকেই প্রকাশ করে, আর আকাশাদি প্রপঞ্চের উল্লেখপূর্বক পুনরায় যে উহা নিরাকরণ করেন, তাহাও আমি ব্যতীত পৃথক্-সত্তার নহে, ইহাই সকল-বেদের তাৎপর্য; অর্থাৎ শব্দশাস্ত্র বেদ পরমার্থভূত বাস্তব-বস্তু আমাকেই আশ্রয়পূর্বক জড়ভেদকে মায়ামাত্ররূপে প্রস্তাব করিয়া পরিশেষে উহার নিষেধানন্তর চিন্মাত্ৰ-ব্রহ্মজ্ঞানকেও অতিক্রমপূর্বক চিবিলাস-বৈকুণ্ঠবৈচিত্র্য-বর্ণনে পর্যবসিত হইয়াই প্রসন্ন হন।
(হরিবংশে—)
“বেদে রামায়ণে চৈব পুরাণে ভারতে তথা।
আদাবন্তে চমধ্যে চ হরিঃ সর্বত্র গীয়তে ॥”
অর্থাৎ বেদে, রামায়ণে, মহাভারতে, পুরাণের আদিতে, মধ্যে এবং অন্তে—সর্বত্র একমাত্র শ্রীহরিই কীর্তিত হন॥২৫৫॥
ছাত্রগণ প্রভুকে বলিলেন,— “আপনি এখন কিরূপ অদ্ভুত ব্যাখ্যা করিলেন? প্রভু তদুত্তরে বলিলেন,—শাস্ত্রের যেরূপ সিদ্ধান্ত ও সঙ্গতি, তদ্রূপই আমি ব্যাখ্যা করিয়াছি।