কৃষ্ণভক্তিহীন ভয়-ভোগ-হিংসাত্মক কর্মাদি নিষ্ফল—
ভক্তিহীন কর্মে কোন ফল নাহি পায়।
সেই কর্ম ভক্তিহীন,—পরহিংসা যায়॥”
অতএব হে মাতঃ ! সাধুসঙ্গে সর্বক্ষণ কৃষ্ণের ভজন কর, আর মুখে হরিনাম কীর্তন করিয়া হৃদয়ে কৃষ্ণস্মরণ কর। সাধুসঙ্গ -বর্জিত হইয়া অর্থাৎ অসাধুকে সাধুজ্ঞানে তাহার বিচার গ্রহণপূর্বক কৃষ্ণের ভজন-চেষ্টা করিলে কৃষ্ণসেবার সম্ভাবনা নাই।
সাধুসঙ্গে কৃষ্ণনাম-কীর্তন-কর্তব্যতা,—(ভাঃ ৩/২৩/৫৫) শ্লোকে কর্দমের প্রতি দেবহূতি-বাক্য—)
“সঙ্গে যঃ সংসৃতের্হেতুরসৎসু বিহিতোঽধিয়া।
স এব সাধু কৃতো নিঃসঙ্গত্বায় কল্পতে॥”
অর্থাৎ, ‘হে মুনিবর! বিষয়সঙ্গ সংসারভয়-নাশক হয় না সত্য; কেননা, আসক্তি অসদ-বিষয়ে অবুদ্ধিপূর্বক বিধান করিলে সংসারেরই কারণ হয়; কিন্তু তাহাই সাধুপুরুষে বিহিত হইলে নিঃসঙ্গত্বের ফল দেয়।’
(ভাঃ ১১/২/৩০ শ্লোকে নবযোগেন্দ্রের প্রতি বিদেহরাজ নিমির উক্তি—)
“অত আত্যন্তিকং ক্ষেমং পৃচ্ছামো ভবতোঽনঘাঃ।
সংসারেঽস্মিন্ ক্ষণার্ধোঽপি সৎসঙ্গঃ সেবধির্নৃণাম্।”
অর্থাৎ, ‘অতএব হে পবিত্র ঋষিগণ, আপনাদিগকে আমি আত্যন্তিক মঙ্গলসাধন জিজ্ঞাসা করি; যেহেতু এই সংসারে ক্ষণার্ধ সাধুসঙ্গও মনুষ্যদিগের পরমনিধি-লাভ।’
(ভাঃ ৩/২৫/২০ শ্লোকে দেবহূতির প্রতি ভগবান কপিলের উক্তি—)
“প্ৰসঙ্গমজরং পাশমাত্মনঃ কবয়ো বিদুঃ।
স এব সাধু কৃতো মোক্ষদ্বারমপাবৃতম্॥”
অর্থাৎ ‘সাধুসঙ্গই এই সকলের মূল, এই নিমিত্ত পণ্ডিতেরা কহিয়া থাকেন,—যে আসঙ্গ—আত্মার অজর পাশ, তাহাই সাধুজনের প্রতি বিহিত হইলে নিরাবরণ মুক্তিদ্বারস্বরূপ হয়।
(ভাঃ ৪/২২/১৯ শ্লোকে মহারাজ পৃথুর প্রতি শ্রীসনকুমারের উক্তি—)
“সঙ্গমঃ খলু সাধূনামুভয়েষাঞ্চ সম্মতঃ।
যৎসম্ভাষণসংপ্রশ্নঃ সর্বেষাং বিতনোতি শম্॥”
অর্থাৎ, হে মহারাজ! সাধুসঙ্গ-বক্তা ও শ্রোতা, উভয়েরই অভিলষণীয়; কারণ, সাধুগণ সম্ভাষণপূর্বক যে প্রশ্ন করেন, তাহাতে সকলেরই মঙ্গল-বিস্তার হয়।
(ভাঃ ৪/২৯/৪০ শ্লোকে শ্রীপ্রাচীনবৰ্হির প্রতি শ্রীনারদের উক্তি—)
“তস্মিন্ মহন্মুখরিতা মধুভিচ্চরিত্ৰপীযূষশেষসরিতঃ পরিতঃস্রবন্তি।
তা যে পিবন্ত্যবিতৃষো নৃপ গাঢ়কর্ণৈস্তান্ ন স্পৃশন্ত্যশনতৃড়ৃ ভয়শোকমোহাঃ॥”
অর্থাৎ, ‘সেই সাধুসঙ্গম-স্থানে মহাজনগণ কর্তৃক ভগবান্ বাসুদেবের পবিত্র চরিত্র প্রায়ই কীর্তিত হয়। হে রাজন! ভগবানের চরিত্রকথা—সাক্ষাৎ অমৃতবাহিনী নদী; যে সকল ব্যক্তি উপাদেয় অতৃপ্তির সহিত অবহিতকর্ণপুটে ঐ নদীর অমৃত সেবন করেন তাঁহাদিগকে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ভয়, শোক বা মোহ কিছুই স্পর্শ করিতে পারে না।
(ভাঃ ৪/৩০/৩৩ শ্লোকে শ্রীভগবানের প্রতি শ্রীপ্রচেতোগণের উক্তি—)
“যাবৎ তে মায়য়া স্পৃষ্টা ভ্ৰমাম ইহ কর্মভিঃ।
তাবদ্ভবপ্রসঙ্গানাং সঙ্গঃ স্যান্নো ভবে ভবে॥
অর্থাৎ, ‘তুমি যে বর-গ্ৰহণার্থ আদেশ করিতেছ, তাহাতে আমরা এই বর চাহি যে, তোমার মায়া-দ্বারা সৃষ্ট হইয়া কর্মবশতঃ এ সংসারে আমরা যাবৎকাল ভ্রমণ করিব, তাবৎকাল যেন জন্মে জন্মে তোমার প্রসঙ্গ-রত ব্যক্তিগণের সহিত আমাদের সঙ্গ হয়।’
(ভাঃ ২/২/৩৬ শ্লোকে পরীক্ষিতের প্রতি শ্ৰীশুকোক্তি—)
“তস্মাৎসর্বাত্মনা রাজন হরিঃ সর্বত্র সর্বদা।
শ্রোতব্যঃ কীর্তিব্যশ্চ স্মর্তব্যো ভগবান্ নৃণম্॥”
অর্থাৎ, অতএব হে রাজন! সর্বাত্মদ্বারা সর্বত্র সর্বদা ভগবান্ হরিরই শ্রবণ, কীর্তন এবং স্মরণ কর্তব্য।’
(ভাঃ ৪/২০/২৪ শ্লোকে বৈকুণ্ঠনাথের প্রতি মহারাজ পৃথুর উক্তি—)
“ন কাময়ে নাথ তদপ্যহং কচিন্ন যত্র যুগ্মচ্চরণাম্বুজাসবঃ।
মহত্তমান্তহৃদয়ান্মুখতো বিধৎসু কর্ণাযুতমেষ মে বরঃ॥”
অর্থাৎ, ‘হে প্রভো! মোক্ষপদেও যদি মহত্তম-সাধুদিগের হৃদয়াভ্যন্তর হইতে বদনকমলদ্বারা নির্গত আপনার পাদপদ্ম মকরন্দ প্রাপ্ত হইবার অর্থাৎ আপনার যশঃশ্রবণাদি দ্বারা সুখলাভের সম্ভাবনা না থাকে, তবে ঐ মোক্ষ-পদও আমি কখনও প্রার্থনা করি । আমি এই বর প্রার্থনা করি যে, যাহাতে আপনার যশঃ শ্রবণ করিতে পারি; তন্নিমিত্ত আমাকে সহস্র সহস্র কর্ণ প্রদান করুন।’
(ভাঃ ৫/১২/১৩ শ্লোকেরগণের প্রতি অবধূত-ভরতের উক্তি—)
“যত্রোত্তমঃশ্লোকগুণানুবাদঃ প্রয়তে গ্রাম্যকথাবিঘাতঃ।
নিষেব্যমাণোঽনুদিনং মুমুক্ষোর্মতিং সতীং যচ্ছতি বাসুদেবে॥
অর্থাৎ “হে রাজন্! মহাপুরুষগণের মধ্যে সর্বদা গ্রাম্যকথানাশক ভগবদ্গুণানুবাদেরই প্রস্তাব হয়, সেই ভগবদ্গুণানুবাদ যদি প্রত্যহ শ্রবণ ও কীর্তন-মুখে সেবা করা হয়, তবে তদ্দ্বারাই ভগবৎপ্রতি মুমুক্ষুজনের সদ্বুদ্ধি উদিত হয়।
(ভাঃ ১০/৫১/৫৩ শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি রাজর্ষিমুচুকুন্দের উক্তি—)
“ভবাপবর্গো ভ্রমতো যদা ভবেজ্জনস্য তর্হ্যচ্যুত সৎসমাগমঃ।
সৎসঙ্গমো যৰ্হি তদৈব সদগতৌ পরাবরেশে ত্বয়ি জায়তে মতিঃ॥”
অর্থাৎ ‘হে অচ্যুত! আপনার অনুগ্রহে যখন সংসারিজনের সংসারান্ত হয়, তখন সাধুর সহিত তাহার সমাগম হয়। যে-সময়ে সাধুসঙ্গ হয়, সে-সময় সর্ব-দুঃসঙ্গনিবৃত্তির সঙ্গে কার্য-কারণ-নিয়ন্তা সাধুগণের পরমগতি এবং পরাবরেশ আপনাতে তাহার রতি জন্মে, আপনাতে রতি হইলেই সে তখন মুক্ত হয়।
(ভাঃ ৬/১১/২৭ শ্লোকে ভগবানের প্রতি বৃত্রের উক্তি—)
“মমোত্তমঃশ্লোকজনেষু সখ্যং সংসারচক্রে ভ্রমতঃ স্বকর্মভিঃ।
ত্বন্মায়য়াত্মাত্মজদারগেহেষ্বাসক্তচিত্তস্য ন নাথ ভূয়াৎ॥”
অর্থাৎ, ‘হে নাথ! আমি স্বীয় কর্ম দ্বারা সংসারচক্রে ভ্রমণ করিতে করিতে তোমার ভক্তজনের সহিত আমার সখ্য হউক। ভগবন্! তোমার মায়া-বশতঃ এখন যে-সকল পুত্র-কলত্র-দেহ-গেহে আমার চিত্ত আসক্ত, পুনরায় যেন ঐসকল বস্তুতে আসক্তদ না হয়।’
(ভাঃ ৩/২৫/২৫ শ্লোকে মাতা-দেবহৃতির প্রতি ভগবান্ কপিলের উক্তি—)
“সতাং প্রসঙ্গান্মম বীর্যসংবিদো ভবন্তি হৃৎকৰ্ণরসায়নাঃ কথাঃ।
তজ্জোষণাদাশ্বপবর্গর্ত্মনি শ্রদ্ধা রতির্ভক্তিরনুক্রমিষ্যতি॥”
অর্থাৎ ‘সাধুদিগের প্রকৃষ্ট সঙ্গ হইতে আমার মাহাত্মপ্রকাশক শুদ্ধহৃদয়-কর্ণের প্রীতি-উৎপাদক যে-সকল বাক্য আলোচিত হয়, প্রীতির সহিত সেইসকল কথার সেবন-ফলে শীঘ্রই অবিদ্যা-নিবৃত্তির বর্ত্মস্বরূপ আমাতে যথাক্রমে—প্রথমে শ্রদ্ধা বা সাধন-ভক্তি, পরে রতি বা ভাব-ভক্তি ও অবশেষে প্রেমভক্তি উদিত হয়।
(ভাঃ ১/২/১৪ এবং ১৬-১৮ শ্লোকে শৌনকাদি ঋষিগণের প্রতি শ্ৰীসূত-গোস্বামীর উক্তি—)
“তস্মাদেকেন মনসা ভগবান্ সাত্বতাং পতিঃ।
শ্রোতব্যঃ কীতিতব্যশ্চ ধ্যেয়ঃ পূজ্যশ্চ নিত্যশঃ॥
” ** “শুশ্রূষোঃ শ্ৰদ্দধানস্য বাসুদেবকথারুচিঃ।
স্যান্মহৎসেবয়া বিপ্রাঃ পুণ্যতীর্থনিষেবণাৎ॥
শৃগ্ধতাং স্বকথাঃ কৃষ্ণঃ পুণ্যশ্রবণকীর্তনঃ।
হৃদ্যন্তঃস্থো হ্যভদ্রাণী বিধুনোতি সুহৃৎ সতাম্॥
নষ্টপ্রায়েষ্বভদ্ৰেষু নিত্যং ভাগবতসেবয়া।
ভগবত্যুত্তমঃশ্লোকে ভক্তিৰ্ভগবতি নৈষ্ঠিকী॥”
অর্থাৎ, ‘অতএব ভক্তি-প্রধান ধর্মই নিত্যানুষ্ঠেয় হওয়ায় একাগ্রমনে ভক্তবৎসল বাসুদেবের নিত্যকাল শ্রবণ, কীর্তন, মনন এবং অর্চনই কর্তব্য।* * ‘হে বিপ্রগণ! শ্রদ্ধাবান ও শ্রবণরূপ সেবনে অভিলাষী ব্যক্তি মহতের সেবা ও পুণ্যতীর্থের (বৈষ্ণবগুরুর) নিষেবণাদি দ্বারা নিষ্পাপ হইয়া ক্রমশঃ বাসুদেবের কথায় রুচিবিশিষ্ট হন। অপ্রাকৃত-শ্রবণীয় ও কীর্তনীয় সজ্জন-সুহৃদ শ্রীকৃষ্ণ নিজ-কথা-শ্রবণকারী ব্যক্তিগণের হৃদয়স্থ হইয়া হৃদগত সমস্ত অশুভ কামাদি-বাসনা। বিনষ্ট করেন। নিত্যকাল ভাগবতসেবা-দ্বারা অশুভসকল নষ্ট হইলে উত্তমঃশ্লোক ভগবানে নিশ্চলা ভক্তি উদিত হয়॥’
ভগবৎসেবনোদ্দেশ্য-রহিত হইয়া যে পুণ্য সৎকর্ম সাধিত হয়, তদ্দ্বারা কর্মকর্তার কোন ফললাভ হয় না। ভক্তিহীনকর্মই পরহিংসাময় অর্থাৎ যে-স্থলে ভক্তির অভাব, সে স্থলে সকল অনুষ্ঠানই পরহিংসায় পর্যবসিত হয়। কর্ম ও জ্ঞানভক্তির মুখনিরীক্ষকমাত্র, কিন্তু ভক্তি—কর্ম-জ্ঞান-যোগ,—কাহারও সাহায্য-প্রার্থিনী নহেন, স্বয়ংই স্বাধীন ও নিরপেক্ষা। ভক্তির অনুষ্ঠানে পরহিংসার সম্ভাবনা নাই অর্থাৎ ভগবৎসেবায় উন্মুখ হইলে সেবকের ভগবৎকর্মে কোনরূপ পরহিংসা-চেষ্টা থাকিতে পারে না।
বহির্মুখ-কর্ম-নিন্দা,--(ভাঃ ৩/২৩/৫৬ শ্লোকে মাতা দেবহৃতির প্রতি ভগবান্ কপিলের উক্তি—)
“নেহ যৎকর্ম ধর্মায় ন বিরাগায় কল্পতে।
ন তীর্থপদসেবায়ৈ জীবন্নপি মৃতো হি সঃ॥”
অর্থাৎ ‘ইহ-সংসারে যে ব্যক্তির কর্ম, ধর্মার্থকামরূপ ত্রৈবর্গিক-ধর্মের উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত না হয়, যাহার সেই ধর্ম নিষ্কাম হইয়া কৃষ্ণেতর বিষয়ে বৈরাগ্য উৎপাদন না করে, আবার যাহার সেই বৈরাগ্য তীর্থপদ শ্রীহরির সেবাতেই পর্যবসিত না হয়, সে ব্যক্তি জীবিত হইলেও মৃত অর্থাৎ তাহার প্রাণধারণ—বৃথা।
(ভাঃ ১/২/৮ শ্লোকে শৌনকাদি ঋষিগণের প্রতি শ্রীসূতগোস্বামীর উক্তি—)
“ধর্ম স্বনুষ্ঠিতঃ পুংসাং বিশ্বসেনকথাসু যঃ।
নোৎপাদয়েদ্যদি রতিং শ্রম এব হি কেবলম॥”
অর্থাৎ ‘যদি মানবগণের বর্ণাশ্রমপালনরূপ-স্বধর্ম অনুষ্ঠিত হইয়াও তাহা বিষ্ণু-বৈষ্ণবের মহিমাময়ী কথার শ্রবণ-কীর্তনে রুচি উৎপাদন না করে, তবে ঐরূপ ধর্মানুষ্ঠান নিশ্চয়ই কেবল বৃথা শ্রম-মাত্র।
(ভাঃ ১/৫/১২ শ্লোকে শ্রীবাসের প্রতি শ্রীনারদের উক্তি—)
“নৈষ্কমপ্যচ্যুতভাববর্জিতং ন শোভতে জ্ঞানমলং নিরঞ্জনম্ ।
কুতঃ পুনঃ শশ্বদভদ্রমীশ্বরে ন চাপিতং কর্ম যদপ্যকারণম্॥”
অর্থাৎ ‘নিষ্কর্মেব ভাবই নৈষ্কৰ্য্য; উহাতে কর্মকাণ্ডের বিচিত্রতা নাই; সুতরাং উহা একাকার-স্বরূপ। ঐরূপ কর্মবিচিত্রতা-হীন নৈষ্কৰ্য্যরূপ ব্রহ্মজ্ঞান স্থুল-লিঙ্গ-দেহে আত্মবুদ্ধিরূপ ঔপাধিক ধর্মের নিবর্তক হইলেও যখন অচ্যুতভাবহীন অর্থাৎ ভগবদ্ভক্তিরহিত হইলে শোভা পায় না, তখন সাধন ও সিদ্ধিকালে দুঃখরূপ কাম্যকর্ম এবং অকাম্যকর্ম যদি ভগবানে অর্পিত না হয়, তাহা হইলে ঐ সকল কর্ম কিপ্রকারে শোভা পাইতে পারে?
(গীতায় ৯/২১ শ্লোকে অর্জুনের প্রতি শ্রীকৃষ্ণের উক্তি—)
“তে তং ভুক্কা স্বর্গলোকং বিশালং ক্ষীণে পুণ্যে মর্তলোকং বিশন্তি।
এবং ত্রয়ীধর্মমনুপ্ৰপন্না গতাগতং কামকামা লভন্তে।”
অর্থাৎ ‘কর্মিগণ যজ্ঞাদি পুণ্যকর্ম-ফলে স্বর্গলাভ করে। তথায় প্রভুত সুখ ভোগ করিয়া পুণ্যক্ষয় হইলে পুনরায় মর্ত্যলোকে আগমন করে। এইরূপ কামকামী ব্যক্তিগণ বেদত্রয়ীর অনুগত হইয়া সংসারে পুনঃ পুনঃ গমনাগমন করিতে থাকে।
(মুণ্ডকে ১/২/৭—)
“প্নবা হ্যেতে অদৃঢ়া যজ্ঞরূপা অষ্টাদশোক্তমবরং যে কর্ম।
এতচ্ছ্রেয়ো যেঽভিনন্দন্তি মূঢ়া জরামৃত্যুং তে পুনরেবাপি যন্তি॥”
অর্থাৎ ‘যজ্ঞেশ্বর-বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে যাহা অনুষ্ঠিত হয় নাই, তাদৃশ যজ্ঞরূপ প্লব (তরণী)—ভব-সমুদ্রোত্তরণের নিমিত্ত দৃঢ় নহে; কেন না, ঐ সকল যজ্ঞ ভগবদুদ্দেশে অনুষ্ঠিত না হওয়ায় তাহাতে কেবলমাত্র অষ্টাদশপুরুষোক্ত অবর কর্ম বর্তমান বলিয়া উহা অপকৃষ্ট। যে-সকল অবিবেকি-ব্যক্তি উহাকেই শ্রেয়ঃ বলিয়া মনে করিয়া অভিনন্দন করে, তাহারা পুনঃ পুনঃ জরা ও মৃত্যুকে প্রাপ্ত হয়।
(মুণ্ডক ১/২/৯)
“যৎ কর্মিণো ন প্রবেদয়ন্তি রাগাৎ তেনাতুরাঃ ক্ষীণলোকাশ্চ্যন্তে॥”
অর্থাৎ ‘কর্মিগণ কর্মে অনুরাগবশতঃ প্রকৃত-অদ্বয়জ্ঞানতত্ত্বে অনভিজ্ঞ। এইজন্য তাহারা অত্যন্ত ফলভোগাতুর হইয়া কর্মফলে যে স্বর্গাদি-লোক লাভ করে, পুণ্যক্ষয় হইলে সেইস্থান হইতে পুনরায় চ্যুত হয়।”