কৃষ্ণের সেবক জীব কৃষ্ণের মায়ায়।
কৃষ্ণ না ভজিলে এইমত দুঃখ পায়॥
জীবের স্বরূপ—নিত্য কৃষ্ণদাস বৈষ্ণব। বিষ্ণুসেবা-বিমুখ হইবা-মাত্র সে কৃষ্ণের বহিরঙ্গা-শক্তি মোহিনী ছলনাময়ী মায়ার বিক্ষেপণী ও আবরণী বৃত্তিদ্বয়ের অধীন হইয়া পড়ে। ইন্দ্রিয়জজ্ঞানে বস্তুকে মায়ার আশ্রয়ে মাপিয়া লইবার বৃত্তি—ভোগমূলা ও বঞ্চনাময়ী, সুতরাং উহা অনন্ত-দুঃখের প্রসূতি।
(চৈঃ চঃ মধ্য ২০শ পঃ ১১৭, ১১৮, ১২০)
“কৃষ্ণ ভুলি” সেই জীব---অনাদি-বহির্মুখ।
অতএব মায়া তারে দেয় সংসারদুঃখ॥
কভু স্বর্গে উঠায়, কভু নরকে ডুবায়।
দণ্ড্যজনে রাজা যেন নদীতে চুবায়॥”
* * “সাধু-শাস্ত্ৰকৃপায় যদি কৃষ্ণোন্মুখ হয়।
সেই জীব নিস্তারে, মায়া তাহারে ছাড়য়॥”
(ঐ ২২শ পঃ ১২-১৫, ২৪-২৫, ৩৩, ৩৫, ৩৭, ৪১—)
“নিত্যবদ্ধ’—কৃষ্ণ হৈতে নিত্য-বহির্মুখ।
নিত্যসংসার, ভুঞ্জে নরকাদি-দুঃখ॥
সেই দোষে মায়া-পিশাচী দণ্ড করে তারে।
আধ্যাত্মিকাদি তাপত্রয় তারে জারি’ মারে॥
কাম-ক্রোধের দাস হও তার লাথি খায়।
ভ্রমিতে ভ্রমিতে যদি সাধু-বৈদ্য পায়।
তার উপদেশ-মন্ত্রে পিশাচী পলায়।
কৃষ্ণভক্তি পায়, তবে কৃষ্ণ-নিকট যায়।
* * কৃষ্ণ-নিত্যদাস জীব তাহা ভুলি’ গেল।
সেই দোষে মায়া তার গলায় বান্ধিল॥
তাতে কৃষ্ণ ভজে, করে গুরুর সেবন।
মায়াজাল ছুটে, পায় কৃষ্ণের চরণ॥
* * ‘কৃষ্ণ ! তোমার হঙ’ যদি বলে।
একবার। মায়াবদ্ধ হৈতে কৃষ্ণ তারে করে পার॥
* * মুক্তি-ভুক্তি-সিদ্ধি-কামী সুবুদ্ধি’ যদি হয়।
গাঢ়ভক্তিযোগে তবে কৃষ্ণেরে ভজয়॥
* * অন্যকামী যদি করে কৃষ্ণের ভজন।
না মাগিলেহ কৃষ্ণ তারে দেন স্ব-চরণ॥
* * কাম লাগি’ কৃষ্ণ ভজে, পায় কৃষ্ণ-রসে।
কাম ছাড়ি’ ‘দাস’ হৈতে হয় অভিলাষে।