যে করয়ে বন্দী, প্রভু! ছাড়ায় সে-ই সে।
সহজ-মৃতেরে, প্রভু! মায়া কর’ কিসে॥
মাতৃগর্ভে সপ্তম-মাসে অবস্থান-কালে আর্ত-জীব ভগবান্কে কাতরভাবে স্তব করিতেছেন,—যে ভগবানের মায়া আমাকে এই ভব-দুর্গে বা সংসার-কারাগারে দুর্গা বা কারাকর্ত্রীরূপে বন্দী করিয়া সত্ত, রজঃ ও তমোগুণরূপ পাশত্রয়দ্বারা বন্ধন করিয়াছেন অর্থাৎ যে ভগবানের অচিৎ বহিরঙ্গা-শক্তি কৃষ্ণবিস্মৃত বহির্মুখ আমাকে মোহিত করিয়া জড়সুখভোগে প্রমত্ত করাইয়া ত্রিতাপজ্বালায় দগ্ধ করিতেছেন, গুরু-কৃষ্ণপ্রসাদ-প্রভাবে আমার সেবোন্মুখতা-দর্শনে আবার সেই মায়াই ভগবানের চিন্ময়ী স্বরূপশক্তিরূপে আমাকে এই ভবকারা ক্লেশ হইতে মোচন করিতে পারেন। হে ভগবন্! আমি যে-মুহূর্তে তোমাকে আমার নিত্যসেব্য পরমকারণ চেতন প্রভুরূপে না জানিয়া তোমার প্রতি বিমুখ ও তোমায় বিস্মৃত হইয়া এবং তোমার প্রতীতি ব্যতীত অন্য দ্বিতীয়-বস্তু মায়ার প্রতি অভিনিবিষ্ট হইলাম, সেই মুহূর্ত হইতে আমার বুদ্ধিবিপর্যয়—হেতু আমি নিসর্গতঃ শ্বসঞ্ছব বা জীবন্মৃত অর্থাৎ ভোক্তৃঅভিমান-ফলে অচেতনের সেবক হইয়া মৃত শব বা জড়বৎ হইয়া পড়িয়াছি! এখন আবার তোমার বিমুখ-মোহিনী কুহকিনী মায়া-দ্বারা আমাকে আরও অধিকতর বঞ্চনা করিতেছ কেন ?
কৃষ্ণ-বিস্মৃত হইয়া আমরা সর্বদাই ইন্দ্রিয়জজ্ঞানের সাহায্যে ইন্দ্রিয়তর্পণে ব্যস্ত থাকিয়া অতীন্দ্রিয় অধোক্ষজের অপ্রাকৃত সেবা-বিচারে বিমুখ হই। ইহা আমাদের জড়প্রভুত্ব বা জড়দাস্যাত্মক নিসর্গেরই পরিচয়; অর্থাৎ জড়বস্তু যেরূপ স্বতঃকর্তৃত্ব ধর্ম হইতে বঞ্চিত, তদ্রূপ আমরাও স্বতন্ত্র চেতন-বৃত্তির অপব্যবহার ফলে অচিন্মায়া দ্বারা চেতনরহিত হইয়া অজ্ঞানে নিমগ্ন হই।