Normal view
Book Lang.: বাংলা
English
संस्कृता वाक्
Translation

শ্লোক 197

Language: বাংলা
Language: English Translation
  • “মুচি হয়ে শুচি হয়, যদি ‘হরি’ভজে, শুচি হয়ে মুচি হয়, যদি ‘হরি’ত্যজে”—

    চণ্ডাল চণ্ডালনহে, যদি ‘কৃষ্ণ’ বলে।
    বিপ্র বিপ্রনহে,—যদি অসৎপথে চলে

    প্রকৃতপ্রস্তাবে কৃষ্ণভক্ত চণ্ডাল-কুলোদ্ভূত হইলেও তাহারই ব্রাহ্মণোত্তমতা এবং ব্রাহ্মণকুলোৎপন্ন অসদ্‌বৃত্তিজীবী কৃষ্ণভক্তিহীন পাষণ্ডীর চণ্ডালত্ব সর্বশাস্ত্র সিদ্ধ। জাতি-সামান্য-বুদ্ধিতে তাঁহাদের উভয়ের দর্শন— নিষিদ্ধ। রুচি, বৃত্তি, স্বভাব বা লক্ষণানুসারেই তাহাদের বর্ণ-নির্দেশ বিধেয়— ইহাই সমগ্র শ্রুতি-পুরাণেতিহাস-পঞ্চরাত্রাদি শাস্ত্রের অভিপ্রায় ও সিদ্ধান্ত।

    “আর্জবং ব্রাহ্মণে সাক্ষাৎ শূদ্রোহনার্জবলক্ষণঃ। গৌতমস্ত্বিতি বিজ্ঞায় সত্যকামমুপানয়ৎ।” (ছান্দোগ্যে মাধ্বভাষ্যধৃত সামসংহিতা-বাক্য), অর্থাৎ ‘ব্রাহ্মণে সাক্ষাৎ সরলতা এবং শূদ্রে কুটিলতা বর্তমান। হারিদ্রুমত গৌতম এইরূপ গুণ বিচার করিয়াই সত্যকামকে উপনয়ন বা সাবিত্র্যসংস্কার প্রদান করিয়াছিলেন।’

    শুগস্য তদনাদরশ্রবণাত্তদা দ্রবণাৎ সূচ্যতে হি॥” (—ব্রঃ সূঃ ১।৩।৪৪); এবং “নাসৌ পৌত্রায়ণঃ শূদ্রঃ শুচাদ্‌দ্রবণমেব হি শূদ্রত্বম্।” (–ঐ পূর্ণপ্রজ্ঞমাধ্বভাষ্য)। “রাজা পৌত্রায়ণঃ শোকাচ্ছূদ্ৰেতি মুনিনোদিতঃ। প্রাণবিদ্যামবাপ্যাস্মাৎ পরং ধর্মমবাপ্তবান্॥” (–পদ্মপুরাণ)

    অর্থাৎ ‘শোকদ্বারা যিনি দ্রবীভূত, তিনিই ‘শূদ্র’। পদ্মপুরাণে লিখিত হইয়াছে যে, ‘রাজা’ পৌত্রায়ণ ক্ষত্রিয় হইপলেও শোকের বশবর্তী হওয়ায় রৈক্বমুনি-কর্তৃক ‘শূদ্র’ বলিয়া কথিত হইয়াছেন। তিনি এই রৈক্বমুনি হইতে প্রাণবিদ্যা লাভ করিয়া পরমধর্ম প্রাপ্ত হইয়াছেন।’

    “যত্রৈতল্লক্ষ্যতে সর্প বৃত্তং স ব্রাহ্মণঃ স্মৃতঃ। যত্রৈতন্ন ভবেৎসর্প তং শূদ্ৰমিতি নির্দিশেৎ॥” (—মঃ ভাঃ বঃ পঃ ১৮০|২৬) অর্থাৎ ‘হে সৰ্প! যাঁহার ব্রাহ্মণ-স্বভাব দেখা যাইবে, তিনিই ‘ব্রাহ্মণ’ বলিয়া কথিত। যাঁহার ব্রাহ্মণস্বভাব না থাকে, তাহাকে ‘শূদ্র’ বলিয়া নির্দেশ করিবে।’

    “এবঞ্চ সত্যাদিকং যদি শূদ্রেঽপ্যস্তি, তৰ্হি সোহপি ব্রাহ্মণ এব স্যাৎ * * শুদ্রলকামাদিকং ন ব্রাহ্মণেহস্তি, নাপি ব্রাহ্মণলক্ষ্মশমাদিকং শূদ্রেহস্তি। শূদ্রোহপি শমাদ্যুপেতো ব্রাহ্মণ এব, ব্রাহ্মণোঽপি কামাদ্যপেতঃ শূদ্র এব।” (মঃ ভাঃ বঃ পঃ ১৮০।২৩-২৬ শ্লোকের নীলকণ্ঠ-টীকা)।

    অর্থাৎ, এইরূপ সত্যাদি লক্ষণ যদি শূদ্রেও থাকে, তাহা হইলে তিনিও নিশ্চয়ই ব্রাহ্মণ-মধ্যে পরিগণিত হইবেন। কামাদি শূদ্রের লক্ষণসমূহ ব্রাহ্মণে থাকিতে পারে না, আবার শমাদি ব্রাহ্মণ-লক্ষণশূদ্ৰমধ্যে থাকে না। শূদ্রকুলোদ্ভূত-ব্যক্তি যদি শমাদিগুণ দ্বারা ভূষিত থাকেন, তাহা হইলে নিশ্চয়ই তিনি ‘ব্রাহ্মণ’। আর ব্রাহ্মণ-কুলোদ্ভূত ব্যক্তি যদি কামাদিগুণযুক্ত হন, তাহা হইলে তিনি নিশ্চয়ই ‘শূদ্র’—এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই।’

     ‘শূদ্রে চৈতদ্ভবেল্লক্ষ্মং দ্বিজে তচ্চ ন বিদ্যতে । ন বৈ শূদ্রো ভবেৎ শূদ্রো ব্রাহ্মণো ন চ ব্রাহ্মণঃ॥” (—মঃ ভাঃ শাঃ পঃ ১৮৯|৮)॥

    অর্থাৎ, ‘শূদ্রে যদি বিপ্র-লক্ষণ দেখা যায় এবং ব্রাহ্মণে যদিশূদ্র-লক্ষণ উপলব্ধ হয়, তাহা হইলে শূদ্র ‘শূদ্র’-বাচ্য হয় না এবং ব্রাহ্মণ ‘ব্রাহ্মণ’ হইতে পারে না।

    “ব্রাহ্মণঃ পতনীয়েষু বর্তমানো বিকর্মসু। দাম্ভিকো দুষ্কৃতঃ প্রাজ্ঞঃ শূদ্রেণ সদৃশো ভবেৎ। যস্তু শূদ্রো দমে সত্যে ধর্মে চ সততোত্থিতঃ। তং ব্রাহ্মণমহং মন্যে বৃত্তেন হি ভবেদ্দ্বিজঃ ॥” (—মঃ ভাঃ বঃ পঃ ২১৫।১৩-১৫)।

    অর্থাৎ যে ব্রাহ্মণ দাম্ভিক ও বহুল দুষ্কার্যপরায়ণ হইয়া পতনীয় অসৎকর্মে লিপ্ত থাকে, বেদজ্ঞ হইলেও সে শূদ্রতুল্য; যে শূদ্র ইন্দ্রিয়-নিগ্রহ, সত্য ও ধর্ম-বিষয়ে সতত উদ্যমবিশিষ্ট, তাহাকেই আমি ‘ব্রাহ্মণ’ বলিয়া বিবেচনা করি; কারণ, ব্রাহ্মণ হইবার কারণই একমাত্র হরিভজনরূপ ‘সদাচার’।

    “হিংসান্ত-প্রিয়া লুব্ধাঃ সর্বকর্মোপজীবিনঃ। কৃষ্ণাঃ শৌচপরিভ্রষ্টাস্তে দ্বিজাঃ শূদ্রতাং গতাঃ॥ সর্বভক্ষ্যরতির্নিত্যং সর্বকর্মকরোঽশুচিঃ। ত্যক্তবেদস্ত্বনাচারঃ স বৈ শূদ্র ইতি স্মৃতঃ॥” (মঃ ভাঃ শাঃ পঃ ১৮৮ । ১৩; ১৮৯ । ৭)।

    অর্থাৎ, ‘হিংসা, মিথ্যা-ভাষণ, লোভ ও সর্বকর্মের দ্বারা জীবিকা-নির্বাহ এবং অসৎকার্যদ্বারা শুচিভ্রষ্ট হইয়া দ্বিজগণ শূদ্রবর্ণতা প্রাপ্ত হয়। নিত্য সকল-দ্রব্য-ভোজনে রতিবিশিষ্ট, সকল-কর্ম-কারী, অশুচি, ত্যক্তবেদ-পাঠ ও অনাচারী ব্যক্তিই ‘শূদ্র’ বলিয়া কথিত হয়।’

    “ন যোনির্নাপি সংস্কারো ন শ্রুতং ন চ সন্ততিঃ। কারণানি দ্বিজত্বস্য বৃত্তমেব তু কারণম্। সর্বোঽয়ং ব্রাহ্মণো লোকে বৃত্তেন তু বিধীয়তে। বৃত্তে স্থিতস্তু শূদ্রোঽপি ব্রাহ্মণত্বং নিযচ্ছতি॥” (—মঃ ভাঃ অনুঃ শাঃ পঃ ১৪৩ ।৫০-৫১)

    অর্থাৎ, ‘জন্ম বা জাতি, সংস্কার, বেদাধ্যয়ন বা সন্ততি,—কোনটিই দ্বিজত্বের কারণ নহে; বৃত্তই একমাত্র কারণ। বৃত্তে অর্থাৎ বর্ণাভিব্যঞ্জক স্বভাবে প্রতিষ্ঠিত হইলে শূদ্রও ব্রাহ্মণত্ব প্রাপ্ত হয়।’

    “ন শূদ্রা ভগবদ্ভক্তাস্তে তু ভাগবতা মতাঃ। সর্বর্ণেষু তে শূদ্রা যে ন ভক্তা জনার্দনে॥” (—হঃ ভঃ বিঃ ১০ম বিঃধৃত পদ্মপুরাণ-বাক্য)।

    অর্থাৎ, ‘ভগবদ্ভক্তিপরায়ণ ব্যক্তিগণ কখনও ‘শূদ্র’ বলিয়া কথিত নহেন। তাহাদিগকে ‘ভাগবত’ বলিয়াই কীর্তন করা যায়। জনার্দনের প্রতি ভক্তি না থাকিলে যে-কোন জাতিই হউক না কেন, তাহারা ‘শূদ্র’ বলিয়াই গণনীয়।’

    ‘ব্রহ্মতত্ত্বং ন জানাতি ব্রহ্মসূত্ৰেণ গর্বিতঃ। তেনৈব স চ পাপেন বিপ্রঃ পশুরুদাহৃতঃ॥” (—অত্রিসংহিতা ৩৭২ শ্লোক)।

    অর্থাৎ, যে ব্রাহ্মণকুলোদ্ভূত ব্যক্তি বেদ বা ভাগবত্তত্ত্ব বিষয়ে অনভিজ্ঞ থাকিয়া কেবলমাত্র যজ্ঞোপবীতের বলে অতিশয় গর্ব প্রকাশ করে, সেই পাপে সেই ব্রাহ্মণ ‘পশু’ বলিয়া খ্যাত হয়।

    “এতদক্ষরং গার্গি বিদিত্বাস্মাল্লোকাৎ প্রৈতি স ব্রাহ্মণঃ।” (—বৃহদারণ্যক ৩/৯/১০)।

    অর্থাৎ, ‘হে গার্গি! যিনি সেই অচ্যুত-তত্ত্বকে অবগত হইয়া ইহলোক হইতে প্রয়াণ করেন, তিনিই ‘ব্রাহ্মণ।”

    “তমেব ধীরো বিজ্ঞায় প্রজ্ঞাং কুর্বীত ব্রাহ্মণঃ।” (—বৃহদারণ্যক ৪/৪/২১)।

    অর্থাৎ ‘বুদ্ধিমান্ ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ তাঁহাকে (পরব্রহ্মকে) শাস্ত্রাদি হইতে অবগত হইয়া প্রেমভক্তি-লাভার্থ যত্ন করিবেন।

    “বিষ্ণোরয়ং যতো হ্যাসীত্তস্মাদ্বৈষ্ণব উচ্যতে সর্বেষাং চৈব বর্ণানাং বৈষ্ণবঃ শ্রেষ্ঠ উচ্যতে॥” (—পাদ্মোত্তরখণ্ডে ৩৯ অঃ)

    অর্থাৎ ‘যিনি বিষ্ণুসম্বন্ধী তিনিই বৈষ্ণব’-নামে অভিহিত হন এবং সকল বর্ণের মধ্যেই বৈষ্ণব সর্বশ্রেষ্ঠ বলিয়া উক্ত হইয়া থাকেন।’

    সকৃৎ প্রণামী কৃষ্ণস্য মাতুঃ স্তন্যং পিবেন্ন হি। হরিপদে মনো যেষাং তেভ্যো নিত্যং নমো নমঃ॥ পুক্বস শ্বপচো বাপি যে চান্যে ম্লেচ্ছজাতয়ঃ। তেঽপি বন্দ্যা মহাভাগা হরিপাদৈকসেবকাঃ॥” (—পদ্মপুরাণে স্বৰ্গখণ্ডে আদি ২৪ অঃ)।

    অর্থাৎ যিনি শ্রীকৃষ্ণকে একবার মাত্রও (সর্ব অহঙ্কার পরিত্যাগ করিয়া), প্রণাম করিয়াছেন, তাহাকে আর মাতৃস্তন্য পান করিতে হয় না। পুক্বস, কুক্কুরভোজী চণ্ডাল, এমন কি ম্লেচ্ছজাতিসমূহও যদি একান্তভাবে হরিপাদপদ্মে শরণ গ্রহণ করিয়া সেবারত হন, তাহা হইলে তাঁহারাও মহাভাগ ও পূজার্হ।’

    “ন মেঽভক্তচতুর্বেদী মদ্ভক্তঃ শ্বপচঃ প্রিয়। তস্মৈ দেয়ং ততো গ্রাহ্যং স চ পূজ্যো যথা হ্যহম্‌॥”—স্কন্দপুরাণ।

    —‘চতুর্বেদপাঠী অর্থাৎ চৌবে ব্রাহ্মণ হইলেই ভক্ত হয়, এরূপ নয়। অভক্ত চতুর্বেদীও আমার প্রিয় নহে। আমার ভক্ত চণ্ডাল হইলেও আমার প্রিয়, ভক্তই যথার্থ দান-পাত্র এবং গ্রহণ-পাত্র। ভক্ত সর্বথা আমারই ন্যায় পূজ্য।’

    (ভাঃ ৩/৩৩/৭ শ্লোকে—)

    অহো বত শ্বপচোঽতো গরীয়ান্ যাজ্জিহ্বাগ্রে বৰ্ততে নাম তুভ্যম্‌।
    তেপুস্তপস্তে জুহুবুঃ সমুরার্যা ব্রহ্মানুচুনাম গৃণন্তি যে তে॥”

    অর্থাৎ ‘অহো! নামগ্রহণকারী পুরুষের শ্রেষ্ঠতার কথা আর কি বলিব? যাঁহার জিহ্বার একপ্রান্তে ভবদীয় নাম একটি বারের জন্যও উচ্চারিত হন, তিনি শ্বপচগৃহে আবির্ভূত হইলেও এই নামোচ্চারণের জন্যই পূজ্যতম; তাহাদের ব্যবহারিক ব্রাহ্মণতা ত’ পূর্বসিদ্ধই রহিয়াছে; কারণ, তাঁহারা পূর্ব-পূর্ব জন্মেই ব্যবহারিক-ব্রাহ্মণের যাবতীয় অধিকারোচিত কৃত্য, যথা —সর্বপ্রকার তপস্যা, সর্ববিধ যজ্ঞ, সর্বতীর্থে স্নান, সর্ববেদাধ্যয়ন ও সদাচার-পালন সমাপনপূর্বক বর্তমান জন্মে নাম গ্রহণ করিতেছেন।’

    (ভক্তিসন্দর্ভ ১৭৭ সংখ্যা-ধূত গারুড়-বাক্য—)

    “ব্রাহ্মণানাং সহস্রেভ্যঃ সত্রযাজী বিশিষ্যতে।

    সত্রাজিসহস্রেভ্যঃ সর্ববেদান্তপারগঃ॥

    সর্ববেদান্তবিৎকোট্যা বিষ্ণুভক্তো বিশিষ্যতে।

    বৈষ্ণবানাং সহস্রেভ্যঃ একান্ত্যেকো বিশিষ্যতে॥”

    অর্থাৎ সহস্র ব্রাহ্মণ অপেক্ষা একজন যাজ্ঞিক শ্রেষ্ঠ, সহস্র যাজ্ঞিক অপেক্ষা একজন সর্ববেদান্ত-শাস্ত্রজ্ঞ শ্রেষ্ঠ, সর্ব-বেদান্তশাস্ত্রজ্ঞ কোটি ব্যক্তি অপেক্ষা একজন বিষ্ণুভক্ত শ্রেষ্ঠ এবং সহস্র বৈষ্ণব অপেক্ষা একজন একান্তী ভক্ত শ্রেষ্ঠ।

Page execution time: 0.0399739742279 sec