কৃষ্ণের নাম ও গুণ-বর্ণন—
পূতনারে যেই প্রভু কৈলা মুক্তিদান।
হেন কৃষ্ণ ছাড়ি’ লোকে করে অন্য ধ্যান॥
ভগবান কৃষ্ণ নিজ-জিঘাংসা-পরায়ণা মূর্তিমৎ-কাপট্যবিগ্রহ পূতনার নারকী-বৃত্তি-সত্ত্বেও অহৈতুক-দয়া-পরবশ হইয়া উহাকে আধ্যক্ষিক কৃষ্ণবিরোধমূলক-জ্ঞান হইতে মোচনপূর্বক সুদুর্লভ নিজ-পরমপদ প্রদান করিয়াছিলেন। যাঁহারা কৃষ্ণের অসাম্যাতিশয়া অমন্দোদয়া দয়ার মহিমা বিচার করিবার সৌভাগ্য লাভ করেন, তাঁহারাই বুঝিতে পারেন যে, প্রপঞ্চে ও প্রপঞ্চাতীত অপ্রাকৃত জগতে, কোথাও সেই দয়ার সীমা বা তুলনা নাই। সুতরাং নিতান্ত দুর্ভগ, কুমেধা, মূর্খ, নারকী ব্যতীত আর কেহই সর্বোত্তম পরমধর্ম কৃষ্ণপাদপদ্ম-সেবা ছাড়িয়া অন্যত্র চিন্তা বা চেষ্টা করে না।
(ভাঃ ৩।২।২৩ শ্লোকে বিদুরের নিকট শ্রীউদ্ধবের উক্তি—) “অহো বকী যং স্তনকালকূটং জিঘাংসয়াপায়য়দপ্যসাধ্বী। লেভে গতিং ধাত্র্যুচিতাং ততোহন্যং কং বা দয়ালুং শরণং ব্রজেম॥”
অর্থাৎ ‘অহো, এই বকাসুর-ভগ্নী পূতনা, যাঁহাকে বধ করিবার জন্য অসাধু-বৃত্তিযুক্তা হইয়া স্বীয় স্তনকালকূট পান করাইয়াছিল এবং তাহা করাইয়াও মাতৃযোগ্যা গতি লাভ করিয়াছিল, তদ্ব্যতীত অর্থাৎ সেই কৃষ্ণ বিনা আর কোন্ দয়ালুর শরণাপন্ন হইতে পারি?’
(ভাঃ ১০।৪৮।২৬ শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি উদ্ধবের স্তব—) “কঃ পণ্ডিতস্ত্বদপরং শরণং সমীয়াদ্ভক্তপ্রিয়াদৃতগিরঃ সুহৃদঃ কৃতজ্ঞাৎ। সর্বান্ দদাতি সুহৃদো ভজতাহভিকামানাত্মানমপুপচয়পচয়ৌ ন যস্য॥”
অর্থাৎ ‘প্রিয়, সত্যবাক্, সুহৃৎ ও কৃতজ্ঞরূপ আপনাকে ছাড়িয়া কোন্ পণ্ডিত অপরের শরণাপন্ন হন ? আপনি ভজনশীল সুহৃদ ব্যক্তিগণকে সমস্ত কাম এবং আপনাকে পর্যন্ত দিয়া থাকেন, অথচ আপনার হ্রাস-বৃদ্ধি নাই।
(চৈঃ চঃ মধ্য ২২শ পঃ ৯২ ও ৯৪—) “ভক্তবৎসল, কৃতজ্ঞ, সমর্থ, বদান্য। হেন কৃষ্ণ ছাড়ি’ পণ্ডিত নাহি ভজে অন্য॥” * * “বিজ্ঞজনের হয় যদি কৃগুণ-জ্ঞান। অন্য ত্যজি’ ভজে, তাতে উদ্ধব—প্রমাণ।