নিত্য-শুদ্ধ-পূৰ্ণ-মুক্ত চিন্ময়ী পরম-মুখ্যা বিদ্বদ্রঢ়ি-বৃত্তিতে প্রভুর ব্যাখ্যানারম্ভ
আবিষ্ট হইয়া প্রভু করেন ব্যাখ্যান।
সূত্রবৃত্তি-টীকায়, সকল হরিনাম॥
অধ্যাপক-সূত্রে নিমাই কৃষ্ণপ্রেমাবিষ্ট হইয়া শব্দ-শাস্ত্রের অধ্যাপনা-মুখে হরিনামই সমগ্র সূত্র-বৃত্তি ও টীকার একমাত্র তাৎপর্য এইরূপ ব্যাখ্যা করিলেন। শব্দের ত্রিবিধ রূঢ়িবৃত্তির মধ্যে প্রধানতঃ বিদ্বদ্রূঢ়ি, সাধারণ রূঢ়ি ও অজ্ঞরূঢ়ি এই বৃত্তিত্রয় দেখিতে পাওয়া যায়। তৎকালে প্রাকৃত ইন্দ্রিয়তর্পণ পরায়ণ আধ্যক্ষিক শব্দশাস্ত্রাধ্যাপকগণ অজ্ঞরূঢ়িবৃত্তি-চালিত হইয়া প্রতি শব্দকে ইন্দ্রিয়সুখসাধনোপযোগী ভোগ-বাচক বলিয়া জানিতেন, কেহই বিদ্বদ্রূঢ়িবৃত্তি-চালিত হইয়া প্রত্যেক বর্ণ ও শব্দ যে ভগবদুদ্দীপক ও ভগবদ্বাস্তু হইতে অভিন্ন, তাহা ভোগপর-বুদ্ধি-হেতু বুঝিতে পারেন নাই। গৌরসুন্দর শব্দশাস্ত্র-পাঠার্থিগণকে গ্রন্থের আরম্ভ হইতে শেষ পর্যন্ত অধ্যাপন করিতে গিয়া বিদ্বদ্রূঢ়িবৃত্তিদ্বারাই যে প্রকৃত অর্থ আলোচ্য ও বো দ্ধব্য, তাহা ব্যাখ্যা করিয়া বস্তুতঃ প্রত্যেক শব্দেরইভগবদ্বাচকত্ব এবং বাচ্যস্বরূপভগবান বিষ্ণু এবং বাচকস্বরূপশব্দের পরব্যোমবৈকুণ্ঠাধারত্ব-নিবন্ধন পরস্পরের ভেদ-নিষিদ্ধতা অর্থাৎ সম্পূর্ণ অভেদত্ব জানাইলেন। যে স্থলে বাচ্য ও বাচকের মধ্যে প্রতীতিগত বৈষম্য লক্ষিত হয়, সে স্থলে মোহিনী-মায়া-কর্তৃক বঞ্চিত জীবগণের ভোগবুদ্ধিমূলে অজ্ঞরূঢ়িবৃত্তিই প্রকাশিতা। পরব্যোমে বিরাজমান শব্দ-ব্রহ্ম শ্রীনামের উদ্দেশক বিচারব্যতীত তৎকালে অধ্যাপক-বিশ্বম্ভরের যাবতীয় শব্দার্থের অন্য কোনপ্রকার উপলব্ধি ছিল না। কৃষ্ণসেবাময় পরাকাশে প্রস্ফুটিত প্রত্যেক শব্দই শুদ্ধ-চিন্ময়ী বিদ্বদ্রূঢ়িবৃত্তিতে বাচ্যভগবান্ নামি-হরির সহিত সর্বতোভাবে অভিন্ন-বাচক শ্রীহরিনাম-স্বরূপ।