স্তুতি কি বা বিনয় গৌরব নমস্কার।
কিছু না করেন পিতা-পুত্র ব্যবহার।
ভৃগু—ব্ৰহ্মার জ্যেষ্ঠ তনয় হইয়া বিরিঞ্চির স্তব, গৌরব-বাক্য বা পাদসম্বাহনাদি কিছুই করিলেন না। পুত্র হইয়া পিতার গৌরব হানি করা কোনক্রমেই কর্তব্য নহে, তথাপি ব্রহ্মার সর্বজ্ঞত্ব পরীক্ষা করিবার জন্য ভৃগু ঐরূপ অসৌজন্য প্রকাশ করিলেন। উহাতে ব্রহ্মা অসন্তুষ্ট হইয়া ভৃগুকে ভস্মসাৎ করিতে গেলেন। এতদ্দ্বারা প্রমাণিত হইল যে, পরম স্বজন ভক্ত ভৃগুর মহিমা বুঝতে পারিলেন না। সুতরাং গুণাবতারের মধ্যে ব্রহ্মার প্রাধান্য স্বীকৃত হইল না। ভৃগু স্বয়ংই বুঝিতে পারিলেন-ব্ৰহ্মা সর্বকারণকারণ নহেন, ব্রহ্মাণ্ডেরস্রষ্টা মাত্র। পরে ঋষিগণের অনুনয়-বিনয়ে ব্রহ্মার ক্রোধ উপশান্ত হইল। অতঃপর ভৃণ্ড রুদ্রের নিকট গমন করিলে রুদ্র আপনাকে শ্রেষ্ঠ-জ্ঞানে ভৃগুকে কনিষ্ঠ জানিয়া ভৃগুকে প্রেমালিঙ্গন দিতে গেলেন। ভৃগু রুদ্রকে ভৎসনা
করিলেন। কনিষ্ঠ ভৃগু জ্যেষ্ঠ ত্রিলোচনকে ঐ দুর্বিনীত ব্যবহার দেখাইতে গিয়া রুদ্রের ক্রোধ উদ্রেক করাইলেন। রুদ্র সংহার মূর্তিতে ভৃগুবধে যত্নবান্ হওয়ায় রুদ্রতত্ত্ব বুঝিতে ভৃগুর বিলম্ব হইল না। তদনন্তর ভৃগু ক্ষীরসাগরে গিয়া লক্ষ্মীসেবিত-চরণ শ্রীবিষ্ণুর দর্শন পাওয়া মাত্রই ভগবান্ বিষ্ণুকে পদাঘাত করিলেন। ভগবান্ তৎক্ষণাৎ উঠিয়া ব্রহ্মার ও রুদ্রের বিচারের ন্যায় ক্রুন্ধত’ হইলেনই না, বরং তৎপরিবর্তে অত্যন্ত প্রসন্নভাবে ভৃণ্ডকে সসম্ভ্রমে নমস্কার করিলেন এবং আত্মদোষক্ষালন করাইবার প্রার্থনা জানাইলেন। ভগবান্ ভৃগুকে আরও বলিলেন—তাঁহার সেবিকা লক্ষ্মী যে বক্ষে স্থান পাইয়াছেন, সেই বক্ষেই তিনি ভক্তবরের পদ ধারণ করিলেন। বিশ্রম্ভবিচারে অনুরাগপথের নৈপুণ্য প্রদর্শন-লীলা মূঢ়সমাজে বিভিন্নভাবে চিত্রিত হয়। কিন্তু সুচতুর ভক্তগণ আত্মদৈন্য জ্ঞাপন করিয়া ভগবৎপ্রীতি ও ভক্তগণের পরম চাতুর্য প্রকাশ করেন। এজন্যই শ্রীমাধবেন্দ্রপুরীপাদ ।
—যিনি ভক্তিকল্পবৃক্ষের প্রেমাঙ্কুর বলিয়া প্রসিদ্ধ; তাঁহার রচিত শ্লোকে জানিতে পারি, কামক্রোধাদির বশ থাকাকালে সেবাবিমুখতা। বর্তমান থাকে। কৃষ্ণসেবা লাভ করিলেই মানবগণের কামক্রোধাদির হস্ত হইতে পরিত্রাণ ঘটে।