বিধিনিষেধাতীত অচিন্ত্য-চরিত্র নিত্যানন্দের নিন্দা অজ্ঞতাক্রমে হইলেও বিষ্ণু-ভক্তিতে অধিকার
-প্রাপ্ত ব্যক্তির পর্যন্ত তাহা হইতে চিরবঞ্চিত হইতে হয়—
তাঁহার আচার—বিধিনিষেধের পার।
তাঁহারে জানিতে শক্তি আছয়ে কাহার।
মূঢ় জনগণ আকর-বিষ্ণুবস্তু শ্রীনিত্যানন্দকে বুঝিতে না পারিয়া তাহাদের ন্যায় কর্মফলবাধ্য জীব-জ্ঞানে বিচার করিতে গিয়া নরকের পথে অগ্রসর হয়। “অর্চ্যে বিষ্ণৌ শিলাধীঃ” প্রভৃতি শ্লোক-কথিত অপরাধসমূহের ফলে বিষ্ণুবস্তুকে অপর সমজাতীয় বস্তুর সহিত সম-দর্শনে প্রতীত হইলে দ্রষ্টার নরকগমন অবশ্যম্ভাবী। অহঙ্কারবিমূঢ় ব্যক্তি আধ্যক্ষিক-জ্ঞানে প্রতারিত হইয়া আপাত সমদর্শনাবলম্বনে নিজের সর্বনাশ করিয়া থাকে। তারফলে গোপীনাথের পাদপদ্ম বিচ্যুত হইয়া, আলোয়ারনাথের পাদপদ্ম-সেবা পর্যন্ত হারাইয়া ফলে। আলোয়ারনাথের সেবা-সৌভাগ্য নষ্ট হইলে জীবের পঞ্চোপাসকের জগন্নাথোপাসনা আরম্ভ হয় এবং জগন্নাথের উপাসনা করিতে করিতে ভুবনেশ্বরের উপাসনায় মনোনিবেশ করে, পরে ভক্তাধিরাজ ভুবনেশ্বরের শ্রীচরণে অপরাধী হইয়া জীবের পুণ্যকর্মে প্রবৃত্তি লাভ ঘটে। তৎফলে যাজপুরে বৈতরণী স্নানে কর্মকাণ্ডানুষ্ঠানস্পৃহা সম্বর্ধিত হয়। পুণ্যকর্মচ্যুত হইয়া কুকর্মকারী হইলেই জীব অহঙ্কারবিমূঢ়াত্মা হয় এবং কর্তৃত্বাভিমান তাহাকে পরমার্থ হইতে বিচ্যুত
করায়। অপরাধ ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পাইয়া শ্রীগোপীনাথের পাদপদ্ম-শোভার দর্শনে বৈমুখ্য জন্মে। সুতরাং “নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্যঃ” এই শ্রুতির ব্যাখ্যা যাহারা আলোচনা করেন নাই, তাহাদিগেরই দুর্গতি অবশ্যম্ভাবী। নিত্যানন্দপ্রভুর কৃপাব্যতীত জীবের কোন মঙ্গলই হইতে পারে না। নিজ-চেষ্টাদ্বারা আধ্যক্ষিক-জ্ঞানে বলী হইয়া বলদেবের সেবা-রহিত হইলে জীব কৃষ্ণ-সেবা সৌভাগ্য লাভ করিতে পারে না।