‘জ্ঞানী, ‘যোগী, ‘তপস্বী', 'সন্ন্যাসী,-নামে বিখ্যাত
ব্যক্তিগণেরও কৃষ্ণদাস্য-মহিমা ও কৃষ্ণের
অপ্রাকৃত শ্রীবিগ্রহে আস্থাহীন—
‘জ্ঞানী যোগী তপস্বী সন্ন্যাসী’ খ্যাতি যা’র।
কা’র মুখে নাহি দাস্য-মহিমা-প্রচার।
সংসারপ্রমত্ত জনগণ সংসার-দর্শনে উন্মত্ত হইয়া মঙ্গলচণ্ডীর পূজা-দ্বারা ও তাহার গীতে জাগরিত থাকিয়া ধর্মকর্মের চরম সীমায় উঠিয়াছে —বিচার করিত। বিষহরি, ষষ্ঠী প্রভৃতির সেবায় অত্যন্ত দম্ভ করিত অর্থাৎ ভগবৎসেবার সহিত সমজ্ঞানে উহারা আপনাদের পাণ্ডিত্য বিস্তার করিত। কেহ কেহ ধনবৃদ্ধি, বংশবিস্তার, কামনা-সিদ্ধির জন্য মদ্যমাংসদ্বারা দৈত্য-দানবের পুজা করিত। কেহ-বা যোগীপাল, মহীপাল ও ভোগীপাল প্রভৃতি রাজগণের ক্রিয়াকলাপের গান গাহিয়া নৈমিত্তিক -কাম্য ধর্মকর্মের অনুষ্ঠানকেই বহুমানন করিত। অতিসুকৃতিশালী জনগণ স্নানকালেই মাত্র ‘গোবিন্দ’ ‘পুণ্ডরীকাক্ষ’ নাম উচ্চারণ করিত। কাহাকে ‘কৃষ্ণসঙ্কীর্তন’ বলে, কাহাকে ‘বৈষ্ণব’ বলে, কৃষ্ণলীলা-বৈচিত্র্যের উদ্দেশ্য কি, ভুবনমত্ত জনগণ তাহা আদৌ আলোচনা করিত না। শ্রীমাধবেন্দ্র জড়বুদ্ধি লোকের এই প্রকার কদর্যাচরণ দেখিয়া বিশেষ দুঃখিত হইয়াছিলেন। যে সকল ব্যক্তি আপনাকে ‘নারায়ণ’ বলিয়া অভিমানপূর্বক যতিরাজ হইয়া বসিয়া থকিতেন, তাহাদের সহিত বাক্যালাপেও মাধবেন্দ্রপুরীর কোন চেষ্টা ছিল না। জগতের সকল লোক ভক্তিশুন্য বলিয়া তিনি দুঃখসাগরে মগ্ন ছিলেন। উহাদিগকে উত্তোলন করিবার মানসে কৃষ্ণলীলা-সঙ্কীর্তনের অভিনয় আরম্ভ করিয়া দিলেও তাঁহার উদ্দেশ্য কেহই বুঝিতে পারে নাই। ভগবদ্ভক্তির মহিমা জ্ঞানী, যোগী, তপস্বী ও সন্ন্যাসিব্রুব প্রভৃতি ব্যক্তি কেহই বুঝিতে পারিত না।