Normal view
Book Lang.: বাংলা
English
संस्कृता वाक्
Translation

শ্লোক 401

Language: বাংলা
Language: English Translation
  • প্রভুর ভুবনেশ্বরের বিভিন্ন স্থানে শিবলিঙ্গ-দর্শন-পূর্বক ভ্রমণ—

    সেই শিব-গ্রামে প্রভু ভক্তবৃন্দ সঙ্গে।
    শিব-লিঙ্গ দেখি’ দেখি' ভ্রমিলেন রঙ্গে।

    তথ্য। প্রকারান্তর্গত দেবগণ আম্রমূলস্থ পশ্চিমাভিমুখে ‘একাম্রক’-নামক শিব বিরাজমান। উত্তরদিকে একাদশলক্ষলিঙ্গাধিপ ‘উগ্রেশ্বর’ শিবলিঙ্গ, তৎপরে অগ্রভাগে ‘বিশ্বেশ্বর’ লিঙ্গ। গণনাথের পশ্চিমে নন্দী ও মহাকাল। ইঁহারা দুইজন চিত্রগুপ্ত কর্তৃক পূজিত হইয়াছিলেন; এইজন্য ‘চিত্রগুপ্তেশ’ নামে বিখ্যাত। তন্নিকটে ‘শবরেশ্বর’ লিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত। নৈঋত কোণে নবলক্ষাধিক ‘লডডুকেশ্বর’ শিব, তৎসমীপেই ‘শক্রেশ্বর’ শিব বিরাজিত।

    অষ্টায়তন প্রথমায়তনে বিন্দুসরোবর, শ্রীঅনন্তবাসুদেব, পুরুষোত্তম, পদহরা, তীর্থেশ্বর ও অষ্টমূর্তিযুক্ত ভুবনেশ্বর। দ্বিতীয় আয়তনে কপিলকুণ্ড, পাপনাশন-কুণ্ড, মৈত্রেশ ও বারুণেশ। তদনন্তর পাপনাশন তীর্থ। ঐ পাপনাশন কুণ্ডের দক্ষিণভাগে “ঈশানেশ্বর” নামক শিব বিরাজিত। তাহার বায়ুকোণে ‘যমেশ্বর’ লিঙ্গ অবস্থিত। তৃতীয় আয়তনে ‘গঙ্গেশ্বর’ লিঙ্গ বিরাজমান। পূর্বদিকে কিঞ্চিৎ ঈশান-কোণে শতধনু দূরে গঙ্গা-যমুনা প্রবাহিতা। সত্যযুগে গঙ্গা ও যমুনা ভুবনেশ্বরকে দেখিতে অভিলাষ করিয়া ধীরে ধীরে তথায় উপস্থিত হন এবং চতুর্বেদ-মন্ত্র দ্বারা ভুবনেশ্বরের স্তব করিতে থাকেন। ভুবনেশ্বর তাঁহাদের স্তবে সন্তুষ্ট হইয়া তাঁহাদের আকাঙ্ক্ষার বিষয় জিজ্ঞাসা করিলে তাঁহারা একাম্রক ক্ষেত্রে নিত্য বাসের অভিলাষ জ্ঞাপন করেন। শ্রীভুবনেশ্বর গঙ্গা ও যমুনাকে অগ্নিকোণ পৃষ্ঠভাগে স্থান প্রদান করিলেন। ঐ দুই তীর্থে স্নান দ্বারা গঙ্গা ও যমুনা-স্নানের ফলস্বরূপ বিষ্ণুভক্তি লাভ হয়। এই তৃতীয় আয়তনে ‘দেবীপদতীর্থ’ও বিরাজিত। দেবীপদ-তীর্থ সম্বন্ধে পৌরাণিক আখ্যায়িকা পূর্বেই উক্ত হইয়াছে। পার্বতীদেবী ‘কৃত্তি’ ও ‘বাস’ নামক অসুরদ্বয়কে বধ করিয়া যে উত্তম হ্রদ নির্মাণ করেন, তাহাই ‘দেবীপদ’-তীর্থ নামে বিখ্যাত হয়। ফাল্গুনের শুক্লাষ্টমীতে ঐ দেবীপদতীর্থে স্নান করিয়া গোপালিনীর অর্চনা করিলে অভীষ্ট লাভ হয়। ঐ তীর্থের অগ্নিকোণে বিশ্বকর্মা-নির্মিত মন্দিরে শ্রীলক্ষ্মীদেবী যে লিঙ্গ স্থাপন করিয়াছেন, তাহা ‘লক্ষ্মীশ্বর’ নামে বিখ্যাত। চতুর্থায়নে ‘কোটীতীর্থ’ ও ‘কোটীশ্বর’ বিরাজিত। দেবতাগণ ভুবনেশ্বরে আসিয়া মন্দির নির্মাণ করিতে উদ্যোগ করিলে শ্রীভুবনেশ্বর আকাশবাণী-মধ্যে তাহাদিগকে ঈশান কোণে যজ্ঞ করিতে আদেশ দিলেন। দেবতাগণ তদনুসারে সেই স্থানে মন্দির নির্মাণ করাইয়া যথাবিধি প্রতিষ্ঠা, যজ্ঞ, হোম, স্তব প্রভৃতি করিলে ভূবনেশ প্রসন্ন হইয়া বরদানে উদ্যত হইলেন। তখন দেবগণ যজ্ঞকুণ্ড তীর্থে পরিণত হউক’—এইরূপ প্রার্থনা করিয়া অভীষ্ট লাভ করিলেন। ইহাই ‘কোটীতীর্থ’ নামে প্রসিদ্ধ হইল। এই কোটীতীর্থে স্নানাদি করিলে পরমা গতি লাভ হয়। চতুর্থায়নে ‘স্বর্ণজলেশ্বর’ নামক শিবলিঙ্গ বিরাজিত। বিন্দুতীর্থের ঈশানকোণে ৭০ ধনু অন্তরে স্বর্ণজলেশ্বরলিঙ্গ। সেই লিঙ্গের নিকটে মহেশের স্নানার্থ জলাধার কুণ্ড প্রকাশিত হইয়াছে। সেই কুণ্ডে ‘সুবর্ণেশ্বর’ বিরাজিত।

    ভুবনেশ্বর ঈশানকোণে শতধনু দূরে পঞ্চাশৎ ধনু বিস্তৃত সুরেশ্বর তীর্থ। তথায় ‘সুরেশ্বর’ মহাদেব বিরাজমান। ইঁহার নিকটেই ‘সিদ্ধেশ্বর’, ‘মুক্তেশ্বর’, ‘স্বর্ণজলেশ্বর’, ‘পরমেশ্বর’ ‘আম্রাতকেশ্বর’, ‘ব্রহ্মেশ্বর’, ‘মেঘেশ্বর’, ‘কেদারেশ্বর’, ‘চক্রেশ্বর’, ‘বিশ্বেশ্বর’ ও ‘কপিলেশ্বর’ । ইহাদের অর্চন করিলে বিষ্ণুভক্তি লাভ হয়। সিদ্ধেশ্বরের অগ্নিকোণে দক্ষিণমুখ শিব ‘কেদারেশ্বর’ নামে প্রসিদ্ধ। সিদ্ধেশ্বরের পূর্বদিকে ‘চক্রেশ্বর’ নামক শিব, তদনন্তর ‘যজ্ঞেশ্বর’ বা ‘ইন্দ্ৰেশ্বর’ শিব।

    দেবতাগণ বিষ্ণুভক্তিসহকারে লিঙ্গপূজা করিয়া বিশ্বকর্মার দ্বারা প্রাসাদ নির্মাণ করাইলেন। তাহাতে ভুবনেশ প্রসন্ন হইয়া ঐ লিঙ্গে বিষ্ণুপ্রিয়তম শিবের সান্নিধ্য ও বিষ্ণুসেবায় সিদ্ধিদান-হেতু লিঙ্গের নাম ‘সিদ্ধেশ্বর’ হইবে, এই বর প্রদান করেন। এই ‘সিদ্ধেশ্বর’ লিঙ্গের ২০০ ধনু দূরে সিদ্ধিদায়ক ‘সিদ্ধাশ্রম’ রহিয়াছে। তন্নিকটে ‘মুক্তেশ্বর’ শিব প্রতিষ্ঠিত। মুক্তেশ্বরের সমীপে

    সিদ্ধকুণ্ড’, দক্ষিণে ‘পুণ্যকুণ্ড’  সিদ্ধেশ্বরের দক্ষিণে কেদারদেব। তৎপার্শ্বে গৌরী দেবী। নিকটে ‘গৌরীকুণ্ড’ বিরাজিত। হিমালয় ঐ লিঙ্গের পূজা করায় উহার নাম ‘হেমকেদার’ হইয়াছে। ঐ লিঙ্গের পশ্চিমে, দক্ষিণে ও উত্তরে তেজোময় জলধারা নির্গত হইয়া থাকে। উক্ত স্বয়ম্ভু লিঙ্গের সম্মুখে ভবপীঠ। ইহার নিকটে ‘শান্তিশিব’, ‘শান্তশিব’ এবং ‘দৈত্যেশ্বর’ নামে তিনটী রুদ্ৰলিঙ্গ মরুদ্‌গণের দ্বারা পূজিত হন। হিরণ্যকশিপুর নিকট আকাশবাণী হইয়াছিল,—‘সিদ্ধেশ্বরের নিকটে পশ্চিমভাগে দৈত্যপূজিত ‘দৈত্যেশ্বর’ শিবের পূজা কর।‘ সিদ্ধেশ্বরের পূর্বভাগে ইন্দ্ৰ-পূজিত ইন্দ্ৰেশ্বর। পঞ্চমায়তনে ব্রহ্মযজ্ঞ হইতে আবির্ভূত ব্রহ্মেশ্বর’ লিঙ্গ ও ‘ব্রহ্মকুণ্ড’ । কৃত্তিবাসের ১১০ ধনু অন্তরে ঈশানকোণে (কিছু অগ্নিকোণে) ‘গোকর্ণেশ্বর’ ‘সুষেণ’ ও ‘গোকর্ণাসুর’ এই লিঙ্গের পূজা করিতেন। তৎসমীপেই ‘উৎপলেশ্বর’ ও ‘আম্রতকেশ্বর’ লিঙ্গ। ষষ্ঠায়তনে ‘মেঘেশ্বর’ লিঙ্গ বিরাজিত। কল্পবৃক্ষের ঈশানভাগে ১৭০০ ধনু দূরে লিঙ্গ স্থাপনপূর্বক মেঘগণ শিবপূজা করিয়াছিল বলিয়া এই লিঙ্গ ‘মেঘেশ্বর’ নামে প্রসিদ্ধ হইয়াছেন। ইহার পশ্চিমে কিছু বায়ুকোণে ভাস্করপুজিত ‘ভাস্করেশ্বর’ লিঙ্গ। ১৫০০ ধনু দূরে মহাদেব এ সুর্য নিত্য সন্নিহিত আছেন। ইহার পশ্চিমে ৮০০ ধনু অন্তরে ‘কপালমোচন’ শিব। সপ্তমায়তনে অলাবুতীর্থ। ইন্দ্রের সখা জনৈক বিপ্র সহস্র দৈববর্ষব্যাপী তপস্যাচরণ করিলে ভুবনেশ প্রসন্ন হইয়া উক্ত বিপ্রের ভিক্ষাপাত্র ও জলাধার (অলাবু) তীর্থে পরিণত হউক’,—এইরূপ বর প্রদান করিলেন। অলাবু হস্তদ্বারা স্পর্শ করায় তাহা দিব্য হ্রদে পরিণত হইল। তাহার দক্ষিণ ভাগে ‘ঔত্তরেশ’। কেদারের পশ্চিমে ঔত্তরেশ্বর ভাস্কর মূর্তি, কপালে চন্দ্রলেখা, ত্রিলোচন, গ্রহনক্ষত্রমালাযুক্ত, চিতাভস্মভূষণ, সর্পশোভিত গাত্র, বিকট বদন, দিগ্বসন। সন্নিকটে মাংসশোণিতপ্রিয়া মদোন্মত্তা কোটরাক্ষা, বিরূপলোচনা, তুর্যগীতপ্রদায়কা তিনটী যোগিনী অবস্থিত। বশিষ্ঠ ও বামদেব এই স্থানে বাস করেন, এইরূপ শ্রুত হয়। ইহার নিকটে ‘ভীমেশ’ নামক লিঙ্গ বিরাজিত আছেন, তিনি সকলের ভয় হরণ করেন। অষ্টমায়তন “অশোক ঝর” নামক রামকুণ্ড অশ্বমেধ যজ্ঞ হইতে উদ্ভূত। রামেশ্বর’, ‘সীতেশ্বর’, ‘হনুমদীশ্বর’, ‘লক্ষ্মণেশ্বর’, ‘ভরতেশ্বর’, ‘শত্রুঘ্নেশ্বর’, ‘লবেশ্বর’, ‘গোসহস্রেশ্বর’ প্রভৃতি লিঙ্গ বিরাজিত।

Page execution time: 0.0387449264526 sec