ভক্তগণের নিরপেক্ষতায় প্রভুর সন্তোষ—
প্রভু বলে,—“কাহারো যে কিছু না লইলা।
ইহাতে আমার বড় সন্তোষ করিলা।
নিত্যানন্দ, গদাধর, মুকুন্দ, গোবিন্দ ও ব্রহ্মানন্দ, ইঁহাদিগকে গৌরসুন্দর জিজ্ঞাসা করিলেন—“তোমাদের কাহার সহিত কি কি পাথেয় আছে?” তাঁহারা তদুত্তরে বলিলেন—“আমাদের কাহারও আপনি ব্যতীত কোন সম্বল নাই।’’ ইহা শ্রবণ করিয়া তাঁহাদের ঐকান্তিকতা জানিয়া গৌরসুন্দর পরম সন্তোষ প্রকাশ করিলেন। ব্যভিচারী মিছাভক্তগণ ঐ সকল কথা বুঝিতে না পারিয়া গুরুবৈষ্ণব ও ভগবানের মধ্যে বিরোধ-ভাবের কল্পনা করিয়া অভেদ বিচার বুঝিতে পারে না। অচিন্ত্যভেদাভেদ রসপুষ্টির একমাত্র কারণ, চিদরসে যে ভেদ বা বৈচিত্র্য উপলব্ধি হয়, তাহা নিত্য হইলেও সমগ্রলীলার সহিত অভিন্ন “একমেবাদ্বিতীয়ম” বাক্যের বিরোধী নহে। “একমেবাদ্বিতীয়ম বিচারে বিচিত্রতা ও বৈশিষ্ট্য-জনিত ভেদ নাই—একথা যাঁহারা বলিয়া থাকেন, তাঁহারাই ‘মায়াবাদী’ । বিষয়াশ্রয়ের বৈশিষ্ট্য লোপ করিতে গেলে ‘মায়াবাদ’ আসিয়া পড়ে এবং বিষয়াশ্রয়ের পার্থক্য-বিচারে তত্ত্বজ্ঞানাভাবে অতাত্ত্বিক ও জড়রসে পতিত হইয়া বৌদ্ধসাহজিক বিচারই অবলম্বনের বিষয় হয়।