কাশীরাজের কৃষ্ণকে যুদ্ধে পরাজয় করিবার কামনায়—
শিব-পুজা দৈবে আসি কালপাশ লাগিল তাহারে।
উগ্র-তপে শিব পূজে কৃষ্ণে জিনিবারে।
তথ্য। শ্রীমদ্ভাগবত (১০/৬৬ অধ্যায়ে) কাশীরাজ সুদক্ষিণের উপাখ্যান এইরূপ —
ভগবান্ বলদেব নন্দব্রজে গমন করিলে অজ্ঞব্যক্তিগণের প্ররোচনায় করুষাধিপতি পৌণ্ড্রক নিজেকে ‘বাসুদেব’ বলিয়া নির্ণয়পূর্বক স্বয়ং ভগবান্ বাসুদেবের নিকট জানাইয়াছিল যে, সে নিজেই বাসুদেব, তদ্ভিন্ন কেহই নহে, অতএব শ্রীকৃষ্ণ যেন, ‘বাসুদেব’ নাম এবং বাসুদেব চিহ্ন সকল পরিত্যাগপূর্বক পৌণ্ডকের শরণ গ্রহণ করেন, নতুবা তাহার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। উগ্রসেন প্রভৃতি সভ্যগণ পৌন্ড্রকের এই আত্মশ্লাঘাসূচক -বাক্য-শ্রবণে উচ্চহাস্য করিয়াছিলেন, এবং শ্রীকৃষ্ণ পৌণ্ডকদূতকে বলিয়াছিলেন যে, সেই মূর্খ নৃপতি মূঢ়তাবশতঃ সুদর্শন প্রভৃতি যে সকল কৃত্রিম চিহ্ন ধারণ করিতেছে, তিনি অচিরেই তাহাকে তৎসমস্ত পরিত্যাগ করাই
বেন এবং যখন সে রণক্ষেত্র শয়ন করিবে তখন কুকুরগণের ভ্যক্ষ্য হইবে ।তৎপরে তিনি সমীপে উপস্থিত হইলে তাঁহার যুদ্ধোদ্যম দর্শন করিয়া পৌণ্ড্রকও সৈন্যসঙ্গে সত্বর নির্গত হইল এবং তন্মিত্র কাশীরাজ তদীয় পৃষ্ঠপোষকরূপে অনুগমন করিল। প্রলয়কালীন অগ্নি যেরূপ চতুর্বিধ ভূতগ্রাম বিনষ্ট করে, তদ্রূপ শ্রীকৃষ্ণও অস্ত্রদ্বারা পৌণ্ড্রক ও কাশীরাজের চতুরঙ্গ-সৈন্য-মণ্ডলীকে বিনষ্ট করিতে লাগিলেন। তৎপরে পৌণ্ডককে বলিলেন, সে যে মিথ্যা ‘বাসুদেব’-নাম ধারণ করিতেছে, তাহা তিনি পরিত্যাগ করাইবেন, নতুবা সংগ্রামেচ্ছা না করিলে পৌন্ড্রকের শরণাগত হইবেন,—এই বলিয়া তীক্ষ্ণ শর দ্বারা তদীয় রথ বিনষ্ট করিয়া সুদর্শন-চক্র দ্বারা পৌন্ড্রেকের মস্তক ছেদন করিলেন এবং কাশীরাজের মস্তক দেহচ্যুত করিয়া কাশীপুরীমধ্যে নিক্ষেপপূর্বক দ্বারকায় প্রবেশ করিলেন। সর্বদা শ্রীহরির অনুরূপ বেশ ধারণ এবং কৃষ্ণচিন্তা হেতু পৌড্রকের মোক্ষপ্রাপ্তি হইয়াছিল।
কাশীরাজের ছিন্ন মস্তক দেখিয়া তাহার মহিষী, পুত্র এবং বান্ধবাদি সকলে রোদন করিতে লাগিল। অতঃপর তৎপুত্র সুদক্ষিণ পিতৃঘাতীর বিনাশ-কামনায় কঠোরভাবে মহাদেবের আরাধনা করিতে লাগিল। মহাদেব সন্তুষ্ট হইয়া তাহাকে বর দিতে ইচ্ছা করিলে সে পিতৃঘাতীর বধোপায় প্রার্থনা করিল। মহাদেব তাহাকে অভিচারবিধানানুসারে দক্ষিণাগ্নির পরিচর্যা করিতে আদেশ করিলেন। তৎকার্য-সমাপনান্তে অতি ভয়ঙ্কর অগ্নিমূর্তি প্রদীপ্তশূলহস্তে যজ্ঞকুণ্ড হইতে উত্থিত হইয়া দ্বারকাভিমুখে গমন করিতে থাকিলে দ্বারকাবাসিগণ ভীত হইয়া অক্ষক্রীড়ারত শ্রীকৃষ্ণসমীপে উপস্থিত হইলেন। শ্রীকৃষ্ণ তাঁহাদিগকে অভয় প্রদানপূর্বক মাহেশ্বরকৃত্যাকে বিনাশ করিতে সুদর্শনচক্রকে আদেশ করিলেন। সুদর্শন-প্রভাবে আভিচারিক কৃত্যাগ্নি প্রতিহত হইয়া বারাণসী প্রত্যাগমনপূর্বক পুরোহিতগণের সহিত সুদক্ষিণকে দগ্ধ করিলে তৎপশ্চাৎ সুদর্শনও বারাণসীপুরীপ্রবিষ্ট হইয়া সমগ্র পুরী দগ্ধ করিয়া পুনর্বার শ্রীকৃষ্ণসমীপে প্রত্যাগমন করিলে।