আদি-বরাহ—
বড় সুখী হৈলা প্রভু দেখি’ যাজপুর।
পুনঃ পুনঃ বাড়ে আনন্দাবেশ প্রচুর।
তথ্য। যাজপুর---কথিত আছে, উড়িষ্যার শৈবরাজ যযাতি কেশরীর নামানুসারে ‘যযাতিপুর’ নামক স্থান অপভ্রংশ হইয়া ক্রমশঃ ‘যাজপুর’ নামে সাধারণ্যে প্রসিদ্ধ হইয়াছে। মতান্তরে, ‘যজ্ঞানুষ্ঠান’ বা ‘যাজন’ শব্দ হইতে ‘যাজপুর’ শব্দ উদ্ভূত হইয়াছে। ১৫১১ খৃষ্টাব্দে শ্ৰীমন্মহাপ্রভু ভ্ৰমণ করিতে করিতে এই যাজপুর-গ্রামে শুভ-পদার্পণকরিয়াছিলেন। যাজপুরে শ্রীবরাহদেবের শ্রীমন্দির বিরাজিত। শ্ৰীমন্মহাপ্রভু শ্রীবরাহদেবের সম্মুখে প্রণামনৃত্য-গীতাদি-লীলা প্রদর্শন করিয়াছিলেন। শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতের ভাষায় এইরূপ বর্ণনা রহিয়াছে,—“চলিতে চলিতে আইলা যাজপুর-গ্রাম। বরাহ-ঠাকুর দেখি’ করিলা। প্রণাম ।। নৃত্য-গীত কৈল প্রেমে বহুত স্তবন। যাজপুরে সে রাত্রি করিলা যাপন।।’’ (শ্রী চৈঃ চঃ মধ্য ৫)।
আর একবার মহাপ্রভু এই যাজপুরে পদার্পণ করিয়াছিলেন, শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে এইরূপ আভাস পাওয়া যায়। যে-বার শ্রীমহাপ্রভুর সহিত শ্রীল গদাধর পণ্ডিত গোস্বামী প্রভুর ‘ক্ষেত্রসন্ন্যাস’ পরিত্যাগ-সম্বন্ধে কোন্দল উপস্থিত হইয়াছিল, সে-বার শ্রীল রায় রামানন্দ এবং মহাপাত্র মঙ্গরাজ ও হরিচন্দনের সহিত শ্রীগৌরসুন্দর যাজপুরে আগমন করিয়াছিলেন। মহাপ্রভু মহাপাত্রদ্বয়কে যাজপুর হইতে বিদায় দিলেন। (শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত, মধ্য, ১৬/১৫০ সংখ্যা দ্রষ্টব্য।।)
শ্রীবরাহদেবের দুইটী শৈলী শ্রীমূর্তি পরস্পর সংলগ্না। বড় শ্রীবিগ্রহটির বামপার্শ্বে শৈলী শ্রীলক্ষ্মীমূর্তি, তদীয় বামপার্শ্বে শ্রীজগন্নাথদেবের শ্রীমূর্তি। তাঁহাদের সম্মুখে তাঁহাদের বিজয়-বিগ্রহ অপেক্ষাকৃত ছোট ধাতুময়ী লক্ষ্মীবরাহ-মূর্তি। যাজপুর রোড্ষ্টেশন হইতে বরাহদেবের মন্দির প্রায় ১৭ মাইল, তিনবার মোটর বদল ও মধ্যে দুইটী নদী পার হইতে হয়। নদী দুইটীর দুই ধারেই অনুগামী মোটর বাস প্রস্তুত থাকে। মোটর বাসে প্রথম ৯ মাইল অতিক্রম করিয়া “যমুনা খাই”নদী পার হইয়া পরবর্তী
৬ মাইল রাস্তা পদব্রজে অতিক্রম পূর্বক তৎপরে “বুড়া” নদী পাওয়া যায়। নদী পার হইয়া পুনরায় মোটর বাস পাওয়া যায়।
“রাধাবাই ধর্মশালা” বা “জগন্নাথধর্মশালা” নামে ধর্মশালা আছে। ইহা প্রাচীন জগন্নাথ মন্দিরের নিকটবর্তী। গত ২৫ শে ডিসেম্বর (১৯৩০ খৃষ্টাব্দ) এই স্থানে শ্রীচৈতন্যপাদপীঠ সংস্থাপিত হইয়াছেন। বিস্তৃত বিবরণ ‘গৌড়ীয়’ ১০ম বর্ষ, ২য় সংখ্যায় দ্রষ্টব্য।