প্রভুর বঞ্চনা—
প্রভু বলে,—“আসি আমি ‘আনন্দ’ করিতে।
আগে গিয়া তুমি সজ্জ করহ ত্বরিতে।”
বিবৃতি। অনেক মূঢ় ব্যক্তি তত্ত্বজ্ঞানে অসমর্থ হওয়ায় তাহাদের অজ্ঞানোত্থ ইন্দ্রিয়-তর্পণকেই ‘পরমার্থ’ জ্ঞান করে। শাক্তস্বভাবসম্পন্ন জনগণ নিজেন্দ্রিয়-তর্পণকেই বহুমান করিয়া নিষ্কাম অর্ধোক্ষজসেবা বুঝিতে পারে না। প্রাকৃতসহজিয়াগণই ‘পাপী শাক্ত’-শব্দ-বাচ্য। জড় সম্ভোগই উহাদের একমাত্র প্রয়োজন। এই প্রকার প্রাকৃত সহজিয়াদিগের সঙ্গ উপস্থিত হইলে শ্রীগৌরসুন্দর যেরূপ উহাদিগের অনুমোদন করিয়া উহাদিগকে বঞ্চনা করিতেন, সেরূপ অধুনা এই পতিতের পাবন-বিগ্রহ শ্রীগুরুপাদপদ্ম শ্রীচৈতন্যনীতি-অবলম্বনে বহুজড়ানন্দিদিগকে বঞ্চনা করিতেন। জড়ানন্দিগণ জানে যে, বৈষ্ণবগণও তাহাদের ন্যায় প্রতিষ্ঠা-ভিক্ষু এবং আরও জানে যে, গৃহাদির সৌখ্য প্রদান করিবার লোভ দেখাইয়া বৈষ্ণবদিগকে গৃহব্রত করিবার দুর্বুদ্ধি। পোষণ করিবার জাল বিস্তার করিতে গেলে সর্বতন্ত্রস্বতন্ত্র বৈষ্ণব প্রাকৃতসহজিয়া বা পাপী শাক্তকে ক্রোধবাক্যে ভোগা দিয়া থাকে। প্রাকৃতসহজিয়াদিগের গৃহে তাঁহারা কোনদিন গমন করেন না। প্রাকৃতসহজিয়া-সম্মেলনে সর্বতন্ত্রস্বতন্ত্র শুদ্ধ বৈষ্ণবগণ। কখনও যোগদান করেন না। নির্বোধজনগণ মনে করে যে, পরমমুক্ত মহাভাগবত বুঝি তাহাদের দুরাচারেরই পোষণকারী। কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে উহাদিগকে বঞ্চনা করিয়া তাহাদের দুঃসঙ্গ হইতে পৃথক্ থাকাই গৌরসুন্দর ও তদীয় ‘ভক্তগণের উদ্দেশ্য।