নিত্যানন্দ-বলে,—“ভাঙ্গিয়াছি বাঁশ-খান।
না পার’ ক্ষমিতে, কর’ যে শাস্তি প্রমাণ।
বিবৃতি। পারমহংস্যাবস্থার প্রাগ্ভাগে দণ্ডের অবস্থান; তদ্দ্বারা সকলেই জানিতে পারেন যে, তুর্যাশ্রমস্থিত ব্যক্তি পরমার্থের শেষ সোপানে আরোহণ করিয়াছেন। লৌকিক অর্থ তাঁহাকে অশান্ত করিতে পারে না। কিন্তু নির্দণ্ডাবস্থার সহিত সন্ন্যাসচিহ্ন বহির্ভাগে সংস্থিত না হওয়ায় সাধারণ লোক উহা বুঝিতে পারে না। তজ্জন্যই সর্বোত্তম পরমহংস বৈষ্ণবগণকে অর্বাচীনগণ তাহাদের নিজেদের অপেক্ষা নিম্নস্তরে অবস্থিত বলিয়া জ্ঞান করে। বংশদণ্ড চিহ্নমাত্রধারীকে আশ্ৰমাতীত সর্বোত্তম পরমহংসের নিম্নস্তরে অবস্থিত বলিয়া লোকের ভ্রান্তি হইবে, বিচার করিয়া শ্রীনিত্যানন্দ স্বয়ংরূপ ব্রজেন্দ্রনন্দনের শ্রীচৈতন্যলীলায় বংশ-দণ্ড চিহ্ন বিলুপ্ত করিলেন। তাঁহাকে চিহ্নাধীন বা চিহ্ন-ধারীমাত্র বলিয়া লোকের তাঁহাকে চিহ্নাধীন বা চিহ্ন-ধারীমাত্র বলিয়া লোকের তাঁহাকে পরমেশ্বর জানিতে বাধা হইবে এবং তজ্জনিত অপরাধে জীবের অমঙ্গল ঘটিবে জানিয়া, সেই একদণ্ডকে ত্রিদণ্ডে পরিণত করিলেন। কায়-মনোবাক্যের দণ্ড—এই ত্রিদণ্ডের কথা অসংযত জনগণের বহু মাননীয় এবং ত্রিদণ্ডের একসমাবেশে যে একদণ্ড, উহার সহিত সন্ন্যাস গ্রহণ করা পরমহংসের একমাত্র কৃত্য—ইহা বুঝাইবার জন্যই শ্রীনিত্যানন্দের চেষ্টা। ত্রিদণ্ডিগণের চিত্তবৃত্তি এই যে, তাঁহারা কাহারও আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন না বা কাহাকেও লৌকিক আশীর্বাদ দিবার জন্য প্রস্তুত নহেন। যাহারা জাগতিক বিচারে আবদ্ধ, তাহাদের পরমার্থের সন্ধান নিতান্ত অল্প, বিশেষতঃ “দণ্ডেন দণ্ডী” প্রভৃতি আপেক্ষিকতা শ্রীগৌরসুন্দরে দৃষ্ট হইলে লোকের অমঙ্গল ঘটিবে।