পরমার্থই প্রভুর একমাত্র অনুক্ষণ ভোজ্য—
ভিক্ষা করে প্রভু প্রিয়-বর্গ-সন্তোষার্থ।
নিরবধি প্রভুরে ভোজন-পরমার্থ।
বিবৃতি। বাহিরের দিকে ভিক্ষা-গ্রহণ-ছলনায় ভোজ্যগ্রহণ বহির্জগতে লোকবঞ্চনাৰ্থ স্বীকার মাত্র, কিন্তু সর্বক্ষণ পরমার্থ বিচারে ভগবৎপ্রসাদ-গ্রহণই তাঁহার একমাত্র ভোজ্যস্বীকার বলিয়া লীলা-প্রদর্শন। ভক্তিবিরোধী কর্মিগণ মনে করেন যে, শৌক্রব্রাহ্মণ পরিচয়ে স্ফীত ব্রাহ্মণব্রুবের গৃহে শ্রীগৌরসুন্দর ভোজ্য গ্রহণ করিয়াছিলেন; কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে উহা লৌকিক জড়বুদ্ধিনিরাস মাত্র। যে সকল লোক প্রতারিত হইবার যোগ্য ও পরমার্থে নিত্য বঞ্চিত, সেই সকল কর্মকাণ্ডনিরত বিপ্ৰব্ৰুবগণকে বঞ্চনা করিবার জন্য প্রকাশ্যভাবে ঐ প্রকার মূঢ়াচারের গৌণ অনুমোদন মাত্র। এই প্রকার গৌণ অনুমোদনে কর্মকাণ্ডীয়-জনগণের ভাবিমঙ্গল-লাভ ঘটিবে বলিয়া প্রভুর সেই প্রকার পরমার্থ-বিরোধী কর্মিগণের সন্তোষ-বিধানার্থ চেষ্টা-মাত্র। ভাবি-কালে তাঁহারা বৈষ্ণব হইলে নিজ মঙ্গল লাভ করিয়া প্রভুপ্রিয় হইতে পারিবেন। কিন্তু কৃষ্ণপ্রসাদ ব্যতীত মহাপ্রভু কখনই অন্য কোন বস্তু গ্রহণের লীলা প্রদর্শন করেন নাই। তিনি স্বয়ং সর্বক্ষণ লক্ষাধিক-কৃষ্ণনাম-গ্রহণের আদর্শ প্রদর্শন করিয়া কৃষ্ণের উদ্দেশ্যে বিপ্ৰব্রুব-পাচিত অন্ন সমূহ সমৰ্পণ করিয়া গ্রহণ করিতেন, পাছে বিপ্ৰব্ৰুবসম্প্রদায় তাঁহাকেবিপ্রব্রুবের অনাদরকারী বলিয়া চিরনরকে পতিত হয়। এই অপরাধ হইতে রক্ষা করিবার জন্যই তিনি তাৎকালিক অবৈষ্ণবোচিত স্মার্তাচার-স্বীকার-লীলা প্রদর্শন করিয়াছিলেন। বস্তুতঃ লক্ষেশ্বরের নৈবেদ্য ব্যতীত কৃষ্ণ কখনও অন্য কিছু গ্রহণ করেন না—এই পারমার্থিক বিচারই মহাপ্রভু প্রদর্শন করিয়াছেন । মহাভাগবতগণ প্রত্যহই লক্ষনাম গ্রহণ করেন এবং হরি-গুরু-বৈষ্ণব-প্রসাদ ব্যতীত আর কিছুই গ্রহণ করেন। ; সুতরাং ভক্তমুখে আস্বাদিত মহাপ্রসাদাবশেষই পারমার্থিক ভোজ্য। ইতর ভোজ্য বস্তুসকল মলমূত্রের ন্যায় ত্যাজ্য।