সর্বপ্রথমে স্বীয় ভক্তবন্দনার কারণ-নির্দেশ; সর্বাপেক্ষা বিষ্ণুপূজাই পরম এবং বৈষ্ণবপূজাই পরমতর —
‘আমার ভক্তের পূজা—আমা হৈতে বড়’।
সেই প্রভু বেদে-ভাগবতে কৈলা দঢ় ॥৮॥
ঐশ্বর্যপ্রধান ভক্তের হৃদয়ে, প্রথমতঃ কেবলমাত্র ভগবানের পূজাই সর্বতোভাবে শ্রেষ্ঠ,—এইরূপ ধারণা হয়। তাদৃশী ধারণা কিন্তু ভক্তপূজার মহিমা খর্ব করিয়া ভগবৎপ্রীতির শিথিলতাই প্রকাশ করে। শাস্ত্রে (পদ্মপুরাণ) বলেন,—“আরাধনানাং সর্বষাং বিষ্ণোরাধাধনং পরম্। তস্মাৎ পরতরং দেবি তদীয়ানাং সমর্চনম্। অর্চয়িত্ব তু গোবিন্দং তদীয়ান্নার্চয়েত্তু যঃ । ন স ভাগবতো জ্ঞেয়ঃ কেবলং দাম্ভিকঃ স্মতঃ॥’’
দঢ়-দৃঢ়। মর্যাদা-পথে,ভগবান্ পূজ্য-বস্তু এবং ভগবদ্দাসগণই পূজক। রাগপথে, তাদৃশ পূজ্য-পূজক সম্বন্ধে ঐশ্বর্য প্রবল না থাকায়, সেবা-প্রবৃত্তির আধিক্যহেতু সেবকের প্রগাঢ় সেবাভিমান বর্তমান; তজ্জন্য মাধুর্যরসে সেব্য-বস্তু কৃষ্ণ অপেক্ষাও আপনাকে শ্রেষ্ঠ বলিয়া অভিমানে অথবা সেব্যবস্তুকে আপনার ‘অধীন’ বা ‘আয়ত্ত’ বলিয়া উপলব্ধিতে সেবার প্রগাঢ়তাই বিদ্যমান।
বেদে ভক্ত-পূজার শ্রেষ্ঠত্ব প্রসিদ্ধ; যথা —
“তস্মাদাত্মজ্ঞং হ্যৰ্চয়েদ্ভৃতিকামঃ’’—(মুণ্ডকোপনিষৎ ৩১/১০), (৩/৩/৫১ সংখ্যক ব্রহ্মসূত্রের) শ্রীবলদেব-বিদ্যাভূষণকৃত ‘গোবিন্দ-ভাষ্যে’ এই মন্ত্ৰার্থ ব্যাখ্যা—“আত্মজ্ঞং ভগবত্তত্ত্বজ্ঞং তদ্ভক্তমিত্যর্থঃ; ভূতিকামো মোক্ষপর্যন্ত-সম্পত্তিলিপ্সুরিত্যর্থঃ’’ অর্থাৎ আত্যন্তিক-মঙ্গলেছু ব্যক্তি ভগবদ্ভক্তকে সেবা করিবেন।
“তানুপাস্ব তানুপচরস্ব তেভ্যঃ শৃণু হি তে ত্বামবন্তু’—৩/৩/৪৭ সংখ্যক ব্রহ্মসূত্রে শ্রীমধ্ব-ভাষ্য-ধৃত পৌষায়ণ-শ্রুতি বাক্য; অর্থাৎ ভগবদ্ভক্তগণের উপাসনা কর, তাঁহাদিগের সেবা কর, তাঁহাদের নিকট হইতে শ্রবণ কর, তাঁহারা তোমাকে রক্ষা করিবেন।
“যস্য দেবে পরা ভক্তির্যথা দেবে তথা গুরৌ। তস্যৈতে কথিতা হ্যর্থাঃ প্রকাশন্তে মহাত্মনঃ॥’’ – (শ্বেতাশ্বঃ ৬/২৩, সুবাল =১৬) ইত্যাদি বহু শ্রুতিবাক্য বর্তমান ॥ “তস্মাদ্বিষ্ণুপ্ৰসাদায় বৈষ্ণবান্ পরিতোষয়েৎ । প্রসাদসুমুখো বিষ্ণুস্তেনৈব স্যান্ন সংশয়ঃ ॥’’—ইতিহাস সমুচ্চয়ে) প্রভৃতি বহু সাত্বতশাস্ত্রবাক্য বর্তমান।