বাঞ্ছাকল্পতরু-বৈষ্ণব-চরণে অমানী গ্রন্থকারের দৈন্যভরে গুরু-নিত্যানন্দ-রামদাস্যরূপ স্বাভীষ্ট-প্রার্থনা —
বৈষ্ণব-চরণে মোর এই মনস্কাম।
ভজি যেন জন্মে-জন্মে প্রভুবলরাম ॥৭৮॥
বিবৃতি। সংসারের অন্তর্গত জীবগণ নশ্বর ইন্দ্রিয়তর্পণে ব্যস্ত। তাহারা স্ব-স্ব-অক্ষজজ্ঞানে ভোগ্যবস্তুগুলি মাপিয়া লইয়া থাকে। পরিদৃশ্যমান্ জগতে ভোগবুদ্ধিরহিত হইলে জীবগণ ভগবৎ-প্রকাশ শ্রীনিত্যানন্দাভিন্ন শ্রীগুরুদেবের শ্রীপাদপদ্ম আশ্রয় করিয়া বৈকুণ্ঠবস্তুর সন্ধান লাভ করেন।
শ্রীনিত্যানন্দ-বিগ্রহ-তাঁহার সেব্য-বিগ্রহ শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য হইতে অভিন্ন আশ্রয়-ভাবময় বিষয়বিগ্রহ অর্থাৎ স্বয়ংরূপ ভগবান্ শ্রীগৌর-কৃষ্ণের প্রিয়তম সেবক। মুক্তপুরুষগণের নির্মল আত্মার একমাত্র বৃত্তিই ‘শুদ্ধভক্তি’। অহৈতুক ও অব্যবহিতভাবে শ্রীগৌরকৃষ্ণ-সেবায় উন্মুখ শ্রীগুরুদাসেরই ভক্তিরসামৃত-সিন্ধুতে সন্তরণযোগ্যতা-লাভ হয়। (শ্বেঃ উঃ ৬২৩-) “যস্য দেবে পরা ভক্তির্যথা দেবে তথা গুরৌ। তস্যৈতে কথিতা হ্যর্থা প্রকাশন্তে মহাত্মনঃ॥’’
পরমহংসকুলচূড়ামণি শ্ৰীল নরোত্তম ঠাকুর মহাশয় তৎকৃত ‘প্রার্থনা’-গ্রন্থে বলেন,---“নিতাই-পদকমল,’ কোটিচন্দ্র সুশীতল, যে ছায়ায় জগৎ জুড়ায়। হেন নিতাই বিনে ভাই, রাধাকৃষ্ণ পাইতে নাই, দৃঢ় করি’ ধর নিতাইর পায়।’’৭৮॥
বৈষব অর্থাৎ বিষ্ণুদাসগণের প্রভু যাবতীয় বিষ্ণুতত্ত্বের মূল-অংশীই শ্রীনিত্যানন্দ-বলদেব। গ্রন্থকার সেই প্রভুকে সেবা করিবার অভিলাষে তাঁহার নিত্যদাস বৈষ্ণবগণের চরণে স্বীয় অভীষ্ট প্রার্থনা জানাইতেছেন। বৈষ্ণব-নিত্য, মুক্ত এবং জীবের নিত্য-পূজ্যবস্তু, তাঁহার নিকটই যে সাধকের স্বীয় উপাস্যের উপাসনার নিমিত্ত নিত্য অভীষ্ট প্রার্থনা-জ্ঞাপন বিধেয়, —ইহা বৈষ্ণবাচার্য-গ্রন্থকার স্বয়ং আচরণ করিয়া কপট-দৈন্যাশ্রিত, অহঙ্কার-বিমূঢ়, দীন, দাম্ভিক জীবকে শুদ্ধভক্তির অবিচ্ছেদ্য-অঙ্গ রূপে বৈষ্ণব সমীপে দৈন্যজ্ঞাপনাচরণ শিক্ষা দিতেছেন ॥৭৮ ॥