৫৪ সংখ্যক শ্লোকের পদ্যানুবাদ—
শুদ্ধসত্ত্বমূৰ্ত্তি প্রভু ধরেন করুণায়।
যে-বিগ্রহে সবার প্রকাশ সুলীলায় ॥৬০॥
৬০-৬১ সংখ্যাদ্বয়—পূর্ববর্তী ৫৪ সংখ্যক শ্লোকের পদ্যানুবাদ। শুদ্ধসত্ত্ব,—স্বয়ংভগবান্ শ্রীকৃষ্ণের স্বরূপশক্তির বৃত্তিত্রয় বা প্রভাবত্রয়ের অন্যতম সন্ধিনীর অধীশ্বরই শ্রীবলদেব; তাঁহা হইতেই যাবতীয় গুণত্রয়াতীত উপকরণের অর্থাৎ অবিমিশ্র শুদ্ধ সত্ত্বের প্রাকট্য, অর্থাৎ তিনিই যাবতীয় চিত্তসত্ততার কারণ। যাবতীয় বিষ্ণুবিগ্রহ-তাঁহারই অংশ ও কলাস্বরূপ এবং সকলেই শুদ্ধসত্ত্ববিগ্রহ। (ভাঃ ৪/৩/২৩ শ্লোকে সতীর প্রতি শ্রীমহাদেবের উক্তি--) “সত্ত্বং বিশুদ্ধং বসুদেব-শব্দিতং যদীয়তে তত্র পুমানপাবৃতঃ।সত্ত্বে চ তস্মিন্ ভগবান্ বাসুদেবো হ্যবোক্ষজো মে নমসা বিধীয়তে॥“ইহার টাকায়, (১) শ্রীশ্রীজীবপাদ বলেন, ‘বিশুদ্ধ’ -শব্দে স্বরূপশক্তিত্বহেতু জাড্যাংশরহিত; (২) শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তিপাদ বলেন,—‘বিশুদ্ধ’শব্দে চিচ্ছক্তিবৃত্তিময় অপ্রাকৃত, অপ্রাকৃত অন্তঃকরণই ‘বিশুদ্ধসত্ত্ব’; (৩) শ্রীধরস্বামিপাদ বলেন,—‘সত্ত্ব’-শব্দে ‘অন্তঃকরণ বা শুদ্ধসত্ত্বগুণ; (ভাঃ ১/২/২৪ শ্লোকের টীকায় শ্রীধরস্বামিপাদ বলেন,—) ‘যৎ সত্ত্বং তৎ সাক্ষাদ্ব্রহ্মদর্শনম্।’’ আবার, ভাঃ ১/৩/৩ শ্লোকে “বিশুদ্ধং সত্ত্বমূৰ্জিতম্’’ -পদের টীকায় শ্রীধরস্বামিপাদ বলেন, —বিশুদ্ধং’ রজ-আদ্যসংভিন্ন’ অতএব উর্জিতং নিরতিশয়ং সত্ত্বম্”; শ্রীমন্মধ্বাচার্য-কৃত শ্রীভাগবত-তাৎপর্যে—“সত্ত্বং সাধুগুণত্বং জ্ঞানবলরূপঞ্চ,—“বলজ্ঞান-সমাহারঃ সত্ত্বমিত্যভিধীয়তে’ ইতি মাৎস্যে।’’ শুদ্ধ সত্ত্বেরই অপর নাম-‘বসুদেব’; তাহাতে যিনি প্রকটিত হন, তিনিই ‘বাসুদেব’ (বিষ্ণু)।
(চৈঃ চঃ আদি ৪র্থ পঃ ৬৪-৬৫ সংখ্যা-) “সন্ধিনীর সার অংশ—‘শুদ্ধ-সত্ত্ব’-নাম। ভগবানের সত্ত্বা হয় যাহাতে বিশ্রাম॥ মাতা, পিতা, গৃহ, শয্যাসন আর। এই সব—কৃষ্ণের শুদ্ধসত্ত্বের বিকার॥’’ (ঐ আদি ৫ম পঃ ৪৩-৪৪ ও ৪৮ সংখ্যা—) “চিচ্ছক্তিবিলাস এক— ‘শুদ্ধসত্ত্ব’ নাম। শুদ্ধ সময় যত বৈকুণ্ঠাদি ধাম॥ ষড়্বিধ ঐশ্বর্য তাঁহা সকলই চিন্ময়। সঙ্কর্ষণের বিভূতি সব, জানিহ নিশ্চয়॥** তুরীয়, বিশুদ্ধসত্ত্ব, ‘সংকর্ষণ’-নাম। তেঁহো— যাঁর অংশ, সেই নিত্যানন্দ-রাম॥’’
মূর্তি,--বিগ্রহ; বিগ্রহ,—মূর্তি। বিষ্ণুতত্ত—স্বভাবতঃই চিদ্বিলাসময় সচ্চিদানন্দমূর্তি,—অপ্রাকৃত নাম, রূপ, গুণ, পরিকর বৈশিষ্ট্য-ও লীলাময়; বস্তুতঃ তিনি স্বয়ংই ‘নির্বিশেষ’ বা ‘চিদ্বিলাসবিহীন’ নহেন; তদ্বিমুখ কোন বদ্ধজীবই স্বীয় প্রাকৃত গুণদোষযুক্ত কোনপ্রকার মনোধর্ম সুলভ কল্পনা কখনও তাঁহাকে আরোপ করিতে পারিবে না। তিনি—অধোক্ষজ, এবং জীব ও মায়া-শক্তির অতীত ও অধীশ্বর-তত্ত্ব।
সবার,-মূল-শ্লোকানুসারে, ‘সবার’-শব্দে ‘দ্, সদ্সৎ জগতের,’ অর্থাৎ অচিৎসর্গ কার্যকারণাত্মক এই বিশ্বের; অথবা, চিদ্চিৎ উভয় সর্গ ও তাহাদের ঈশ্বর যাবতীয় বিষ্ণুতত্ত্বের।
সুলীলায়,—অবলীলাক্রমে, বিচিত্রলীলা-প্রভাবে॥৬০ ॥