স্বয়ং যোগেশ্বর হইয়াও শ্রীশেষ-আদি-বিষ্ণুদাস—
আদিদেব, মহাযোগী, ঈশ্বর, বৈষ্ণব।
মহিমার অন্ত ইঁহা না জানয়ে সব ॥৫০॥
আদিদেব,—ভাঃ ২/৭/৪১ শ্লোকে ব্রহ্মা কর্তৃক শ্রীনারদের নিকট শ্রীকৃষ্ণের লীলাবতার-বৰ্ণন-প্রসঙ্গে উক্তি—) “গায়ন্ গুণান দশ-শতানন আদিদেবঃ শেষোহধুনাপি সমবস্যতি নাস্য পারম্।’’ অর্থাৎ ‘সহস্রানন আদিদেব শ্রীশেষ (সহস্রমুখে) কৃষ্ণের গুণ গান করিতে করিতে আজ পর্যন্ত অন্ত পান নাই।’
ভাঃ ৫/২৫/১৬ শ্লোকে পরীক্ষিতের প্রতি শ্ৰীশুকোক্তি—“স এষ ভগবাননন্তোঽনন্তগুণার্ণব আদিদেব উপসংহৃতামর্ষরোষবেগো লোকানাং স্বস্তয় আস্তে।’
অর্থাৎ ‘সেই অনন্ত-গুণনিধি আদিদেব ভগবান্ শ্রীঅনন্তদেব অমর্ষ ও ক্রোধবেগ সংযত করিয়া সমস্ত লোকের মঙ্গলের নিমিত্ত তথায় অবস্থান করিতেছেন।’
শ্ৰীসংকর্ষণই আদিদেব অর্থাৎ আদি-পুরুষ-ভাঃ ৬/১৬/৩১ ও ১০/১৫/৬ শ্লোক দষ্টব্য। মহাযোগী,—(১) যোগেশ্বর, যথা (ভাঃ ১০/৭৮/৩১ শ্লোকে শ্রীবলদেব-কর্তৃক ব্যাসশিষ্য ধর্মধ্বজী রোমহর্ষণ হত হওয়ায় নৈমিষে দীর্ঘসত্রি মুনিগণের হাহাকার ও বলরাম স্তুতি-) “ যোগেশ্বরস্য ভবতো নান্নায়োঽপি নিয়ামকঃ’’ অর্থাৎ, “হে ভগবান্, আপনি—যোগেশ্বর (মহাযোগী), বেদ (বিধি)ও আপনার নিয়ামক নহে (অর্থাৎ আপনি যাহাই করেন, তাহাই বেদবিধি)।’
(২) যোগমায়াধীশ, যথা (ভাঃ ১০/৭৮/৩৪ শ্লোকে স্বয়ং শ্রীবলরামকর্তৃক মুনিগণের প্রার্থনা-পুরণাঙ্গীকার—) “আশাসিতং যৎ তদ্ব্রূত সাধয়ে যোগমায়য়া’’ অর্থাৎ, আপনাদিগের যাহা যাহা প্রার্থিত, সেই সমুদয় বলুন; আমি স্বীয় যোগমায়াদ্বারা তাহা সম্পাদন করিব। ভাঃ ১১/৩০/২৬ শ্লোকে—“রাম সমুদ্রবেলায়াং যোগমস্থায় পৌরুষম্’’ ইহার শ্রীধরস্বামিপাদ-টীকা “পৌরুষং যোগং—পরমপুরুষ-ধ্যান-লক্ষণম্।’’
ঈশ্বর, (ভাঃ ৬/১৬/৪৭ শ্লোকে শ্রীসংকর্ষণের প্রতি চিত্রকেতুর স্তব) “হে ভগবন্! আপনি—সমস্ত জগতের স্থিতি, লয় ও উদ্ভবের ঈশ্বর, ভক্তিহীন কুযোগিণের প্রাকৃত ভেদদৃষ্টি-বশতঃ আপনার নিজ তত্ত্ব—তাহাদের নিকট অবিজ্ঞত; আপনি —পরমহংস, আপনাকে প্রণাম।’’
(ভাঃ ১০/১৫/৩৫ শ্লোকে শ্রীবলদেবের ধেনুকাসুর-বধ বর্ণন প্রসঙ্গে শ্রীশুকদেবকর্তৃক শ্রীপরীক্ষিতের নিকট বলরাম-মাহাত্ম্য কীর্তন) “নৈতচ্চিত্রং ভগবতি হ্যনন্তে জগদীশ্বরে ওতপ্রোতমিদং যস্মিংস্তন্তুষঙ্গ যথা পটঃ॥’’
অর্থাৎ ‘হে রাজন্ ! ধেনুকাসুরকে তালবৃক্ষের উপর প্রক্ষেপপূর্বক উহার বধ-সাধন ও বৃক্ষরাজীর মহাকম্পনোৎপাদন জগদীশ্বর ভগবান্ শ্রীসংকর্ষণের পক্ষে কিছুমাত্র বিচিত্র নহে; কেননা, তন্তুসমূহের মধ্যে বস্ত্রের অবস্থানের ন্যায় তাঁহাতেই এই বিশ্ব-—ওতপ্রোতভাবে অধিষ্ঠিত।’
(ভাঃ ১০/৬৮/৪৫ শ্লোকে ক্রুদ্ধ শ্রীবলদেবের প্রতি তল্লাঙ্গলাকৃষ্ট হস্তিনাপুরবাসী কৌরবগণের স্তবোক্তি- ) “হিত্যুৎপত্তাপ্যয়ানাং ত্বমেকো হেতুর্নিরাশ্রয়ঃ । লোকান্ ক্রীড়নকানীশ ক্রীড়তস্তে বদন্তি হি॥’’
অর্থাৎ, ‘হে ঈশ্বর! আপনিই এই বিশ্বের সৃষ্টি, স্থিতি ও ধ্বংসের একমাত্র কারণ; আপনার আশ্রয় কেহই নাই; তত্ত্ববিৎ পণ্ডিতগণ বিভিন্ন লোকসমূহকে লীলাপ্রবৃত্ত আপনার ক্রীড়া-সামগ্রীরূপে বর্ণন করেন।’
বৈষ্ণব, (ভাঃ ১০/২/৫ শ্লোকে শ্রীপরীক্ষিতের প্রতি শুকোক্তি-) “সপ্তমো বৈষ্ণবং ধাম যমনন্তং প্রচক্ষতে। গর্ভো বভুব দেবক্যা হর্ষশোকবিবর্ধনঃ॥’’
অর্থাৎ, “দেবকীর হর্ষ ও শোকবর্ধক সপ্তম-গর্ভ হইল; তিনি—কৃষ্ণের কলা; লোকে তাঁহাকে ‘অনন্ত’ নামে অভিহিত করেন।’
ইহা,–এই; ভগবান্ শ্রীঅনন্তদেবের এই সব মহিমার অন্ত সকলে অবগত নহেন। ভাঃ ৫/১৭/১৭, ৫/২৫/৬, ৯ ও ১২ ৪৭ শ্লোক (পরবর্তী ৫৬-৫৭ সংখ্যা), ৬/১৬/২৩ ও ৪৬-৪৩ শ্লোক প্রভৃতি দ্রষ্টব্য ॥৫০॥