গৌর, গৌরকীর্তি, গৌরভক্ত ও গৌরভক্ত-নৃত্যের জয় —
জয়তি জয়তি দেবাঃ কৃষ্ণচৈতন্যচন্দ্রো
জয়তি জয়তি কীর্তিস্তস্য নিত্যা পবিত্রা।
জয়তি জয়তি ভৃত্যস্তস্য বিশ্বেশমূর্তে
র্জয়তি জয়তি নৃত্যং তস্য সর্বপ্রিয়াণাম ॥৫॥
অন্বয়। দেবঃ (লীলাময়ঃ স্বরাট) কৃষ্ণচৈতন্যচন্দ্ৰঃ জয়তি জয়তি (অত্যুৎকর্ষেণ জয়তাৎ, ঔৎসুক্য দ্বিরুক্তিঃ ); তস্য নিত্যা। (সনাতনী) পবিত্রা (অচিৎস্পর্শসম্ভাবনা-রহিতা শুদ্ধসত্ত্বময়ী লোকপাবনী) কীর্তিঃ (যশোরশ্মিঃ) জয়তি জয়তি তস্য বিশ্বেশমূর্তে (বিশ্বেশঃ সর্ব জগতাং প্রভুঃ, স এব মূর্ত্তি সাক্ষাৎ চিদ্বিগ্রহঃ, অথবা, বিশ্বেষাং সর্বেষাম্ ঈশানাং প্রভুণাং মূর্তয়ঃ যস্মিন্ যতো বা, তস্য) ভৃত্যঃ (ভক্তঃ) জয়তি জয়তি; ‘তস্য (গৌরস্য স্বকীয়স্য) সর্বপ্রিয়াণাং (সর্বেষাং প্রিয়াণাং প্রিয়বর্গাণাং ভক্তানাম্ ইত্যৰ্থ,; ‘সবপ্রিয়স্য’ ইতি পাঠে ত্বস্য ‘তস্য’ ইতি পদস্য বিশেষণত্বৎ) নৃত্যং (নামকীর্তনমুখে উদ্দণ্ডনৰ্তনং চ) জয়তি জয়তি।
অনুবাদ। লীলাময় স্বরাট্ পুরুষ শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যচন্দ্র জয়যুক্ত হউন, জয়যুক্ত হউন; তাঁহার সনাতনী পবিত্রা কীর্তি জয়যুক্তা হউন, জয়যুক্ত হউন; সর্বেশ্বরেশ্বর সর্বজগৎপ্রভু সাক্ষাৎ চিদ্বিগ্রহ (অথবা, সকল ঈশ্বরগণের প্রভু) শ্রীগৌরসুন্দরের ভক্তবৃন্দ জয়যুক্ত হউন, জয়যুক্ত হউন এবং তাঁহার নিখিল প্রিয়-পরিকরগণের নৃত্য জয়যুক্ত হউন, জয়যুক্ত হউন।
বিবৃতি। শ্রীনবদ্বীপধাম হইতে শ্রীগৌরসুন্দরের শুভ বিজয়ের পর, তাঁহার অনুগমণ্ডলী তাঁহাকে সম্বন্ধাধিদেবতা ‘শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যচন্দ্র’ বলিয়া নির্দেশ করিতেন। শ্রীরূপগোস্বামী স্ব-কৃত স্তবে বলিয়াছেন, “কৃষ্ণায় কৃষ্ণচৈতন্যনাম্নে গৌরত্বিষে নমঃ” (চৈঃ চঃ আদি ৩য় পঃ ৩৪ সংখ্যায়)—“শেষলীলায় নাম ধরে ‘শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য’। ‘শ্রীকৃষ্ণে’ জানাঞ সব বিশ্ব কৈলা ধন॥’’
কেহ যেন এরূপ মনে না করেন যে, “চৈতন্যমঙ্গলের পরিবর্তে ‘ গৌরমঙ্গল’, ‘চৈতন্যভাগবতে’র পরিবর্তে গৌরভাগবত, “চৈতন্যচরিতামৃতে’র পরিবর্তে ‘গৌরাঙ্গচরিতামৃত’ কিংবা “চৈতন্যচন্দ্রোদয়ে’র পরিবর্তে ‘গৌরচন্দ্রোদয়’ প্রভৃতি গ্রহণ করিয়া। অচেতনাশ্রয়ে তাঁহারা শ্রীগৌরাঙ্গের শিক্ষা প্রণালীকে কলঙ্কিত করিতে পারিবেন। শ্রীগৌর-লীলায়, তিনি জগতের হরিবিমুখ অচৈতন্য ব্যক্তিগণের কৃষান্বেষণপ্রবৃত্তিরূপ চৈতন্যধর্ম উদয় করাইবার জন্যই ‘শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য’ নাম গ্রহণ করিয়া, নিঃশ্রেয়সার্থি জনগণের কৃষ্ণভজন-চেষ্টার আদর্শ-উদ্দীপন করিয়াছিলেন।
শ্রীগৌরসুন্দর যে মহাবদান্য ও কৃষ্ণপ্রেমদাতা,—ইহাই তাঁহার পরমপবিত্রা নিত্যা কীর্তি।
সেই বিশ্বেশ-মূর্তি বিশ্বম্ভর গোলোকপতির ভৃত্যস্বরূপ যাবতীয় ভক্তগণই তাঁহার লাল্য এবং তাঁহার সমগ্র সম্পত্তি ও মহৈশ্বর্যের অধিকারী।
শ্রীদামোদর-স্বরূপ, শ্রীরামানন্দ, শ্রীবক্রেশ্বর ও অন্যান্য প্রিয়জনবর্গের গোপীভাবোচিত কীর্তনমুখে দাস্যই সর্বোপরি জয় লাভ করুক।