অন্ত্যখণ্ডের লীলাসূত্র-বিস্তার —
(১) প্রভুর সন্ন্যাসগ্রহণ ও ‘শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য”-নাম-প্রকটন—
শেষখণ্ডে, বিশ্বম্ভর করিলা সন্ন্যাস।
‘শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য নাম তবে পরকাশ ॥
জড়বিষয়াভিনিবেশ-পরিত্যাগের নামই ‘সন্ন্যাস’; ভোগ-প্রয়াস বা কৃত্রিম-ত্যাগ চেষ্টাই কর্মসন্ন্যাস বা জ্ঞান সন্ন্যাসনামে প্রসিদ্ধ। মহাপ্রভু যদিও রানীর ন্যায় সন্ন্যাসলীলা দেখাইয়াছিলেন, তথাপি তাঁহার শ্রীমদ্ভাগবত ১১শ স্কন্ধ ২৩ অঃ বর্ণিত ত্রিদণ্ডি যতির আনুষ্ঠানিক অভিনয়ই উদ্দিষ্ট ছিল,—তন্মুখে “এতাং সমাস্থায়”-শ্লোকের ভিক্ষুগীতিই তাঁহার মুকুন্দসেবাপর যতিবেশ ধারণের প্রমাণ। অহংগ্রহোপাসকের ন্যায় সারূপ্যলাভের বিচার জীবশিক্ষক প্রভু আদৌ গ্রহণ করেন নাই॥
ত্রিদণ্ডি-সন্ন্যাসীর বেষে বাহ্যদর্শনে শিখাসূত্রাদি পরিদৃষ্ট হয় আজও শিক্ষাকে ‘চৈতন্যশিক্ষা’-নামে অভিহিত করা হয়। মুণ্ডি সন্ন্যাসীর পরিবর্তে শিখি-সন্ন্যাসগণই শ্রীচৈতন্যদেবের প্রিয়ভক্ত। ভক্ত-সন্ন্যাসিগণ ভক্তির প্রতিকূল অনুষ্ঠানসমূহ পরিত্যাগ করেন। তাঁহারা ফলুবৈরাগ্যের আদর না করিয়া যুক্তবৈরাগ্যেরই অনুমোদন করেন; যথা- “অনাসক্তস্য বিষয়ান্ যথার্হমুপযুঞ্জতঃ । নির্বন্ধঃ কৃষ্ণসম্বন্ধে যুক্তং বৈরাগ্যমুচ্যতে॥ প্রাপঞ্চিকতয়া বুদ্ধ্যা হরিসম্বন্ধিবস্তুনঃ। মুমুক্ষুভিঃ পরিত্যাগো বৈরাগ্যং ফল্গু কথ্যতে"।