(১৯) দিগ্বিজয়ী কেশব কাশ্মিরীর পরাজয় ও মুক্তি—
আদিখণ্ডে, গৌরাঙ্গের দিগ্বিজয়ী-জয়।
শেষে করিলেন তাঁর সর্ববন্ধক্ষয় ॥১১৪॥
দিব্য পরিধান,সুন্দর বসন; দিব্য সুখ,—অলৌকিক অপার আনন্দ; চন্দ্রমুখ,—উজ্জ্বল আলোকময় স্নিগ্ধ মুখমণ্ডল।
কাশ্মীর-দেশীয় দিগ্বিজয়ী কেশাচার্য’-নামক পণ্ডিতের গর্ব নাশ করিয়া তাঁহাকে পরাজয় করেন। শ্রীগৌরাঙ্গ কেশবের জড়বিদ্যার মাহাত্ম্য অপসারিত করিয়া তাঁহাকে অপ্রাকৃত কৃষ্ণ-তত্ত্ব শিক্ষা দিলেন। কেশব বিবিধ-ছন্দে অবলীলাক্রমে ‘অনর্গল শ্লোক রচনা ও আবৃত্তি করিতে পারিতেন। গঙ্গার বর্ণনে তিনি যে সকল অভিনব শ্লোক রচনা করিয়াছিলেন, প্রভু তাহা স্মরণপথে রাখিয়া পরিশেষে পুনরাবৃত্তি করিয়া পণ্ডিতের বিস্ময় উৎপাদন এবং সেই শ্লোকের নানাবিধ আলঙ্কারিক দোষও প্রদর্শন করিলেন। প্রভুর নিকট কেশব শ্রীরাধাগোবিন্দের উপাসনা-মূলে দ্বৈতা-দ্বৈত-সিদ্ধান্ত সংগ্রহ করিবার সুযোগ পাইলেন। এই কেশবই কিছুদিন পরে ‘নিয়মানন্দ-সম্প্রদায়ে’ শ্রীনিম্বাদিত্যাচার্যের ‘বেদান্তকৌস্তুভ’-ভাষ্যের অনুগমনে ‘কৌস্তুভপ্রভা-নাম্নী বিস্তৃত টীকা রচনা করেন। এই কেশবের প্রণীত ‘ক্রমদীপিকা’-নামক স্মৃতিনিবন্ধ হইতেই শ্রীহরিভক্তিবিলাস’-নামক প্রসিদ্ধ বৈষ্ণবস্মৃতিগ্রন্থে বিবিধ শ্লোক ও বিধি উদ্ধৃত হইয়াছে। শ্রীগৌরসুন্দরের অযাচিত কৃপাই কেশবকে বৈষ্ণবরাজ্যে আচার্যের পদবী প্রদান করিয়াছেন। ইদানীন্তন কেশবানুগত ব্রুব অনভিজ্ঞ সম্প্রদায় কেশবকে মহাপ্রভুর হরিভজনের পথপ্রদর্শকরূপে স্থাপন করিবার যে বৃথা দম্ভমূলা চেষ্টা প্রদর্শন করিয়াছেন বা করিতেছেন, তাঁহাদিগকে ভাবি-দুর্গতি ও অপরাধ হইতে রক্ষা করিবার জন্যই ঠাকুর শ্ৰীবৃন্দাবন-দাস এস্থানে লিখিলেন যে, “শেষে করিলেন তাঁর সর্ববন্ধ ক্ষয়’’।
‘ভক্তিরত্নাকরে’ কেশবের গুরুপরম্পরা প্রদর্শিত হইয়াছে। বৈষ্ণব-মঞ্জুষার ১ম সংখ্যায় ‘কেশব কাশ্মিরী’ শব্দ দ্রষ্টব্য ॥১১৪॥