কৃষ্ণের প্রতি গোপীর স্বীয় ভাব-বৰ্ণন (চিত্রজল্প) :—
যথা রাগ—
“হৈল গোপী ভাবাবেশ, কৈল রাসে পরবেশ,
কৃষ্ণের শুনি’ উপেক্ষা- বচন।
কৃষ্ণের মুখ-হাস্য বাণী, ত্যাগে তাহা সত্য মানি’,
রোষে কৃষ্ণে দেন ওলাহন ॥৩৩॥
৩৩-৩৮।গোপীগণ ভাবে আবিষ্ট হইয়া রাসলীলায় প্রবেশ পূৰ্ব্বক কৃষ্ণের উপেক্ষা-বচন অর্থাৎ ঔদাসীন্য- বাক্য শ্রবণ করত ‘কৃষ্ণ তাঁহাদিগকে ত্যাগ করিলেন’—ইহা সত্য মানিয়া কৃষ্ণকে সরোষ বাক্য কহিতেছেন,—“ওহে নাগর, বল দেখি, এই ত্রিজগতে যত যোগ্যা নারী আছে, তোমার বেণু কাহাকে না আকর্ষণ করে ? জগতে তুমি বেণুধ্বনি করিলে, উহা মন্ত্রাদি সিদ্ধা যোগিনীরূপে দূতী হইয়া নারীগণের মন মোহিত (প্রলোভিত) করে এবং তাহাদের মহা-উৎকণ্ঠা বাড়াইয়া (পতিগুরু জন প্রভৃতির সেবারূপ) বেদবিহিত পথ পরিত্যাগ করাইয়া (পরকীয়া কান্তাভাবে) তোমার নিকট সমর্পণ করে। সেই বেণু ও কটাক্ষরূপ কামশরদ্বারা আমাদিগকে বিদ্ধ করত ধৰ্ম্মপথ ও লজ্জা-ভয় ছাড়াইয়া তোমার নিকট আনিয়াছ। কিন্তু পতি ত্যাগাদি দোষ দেখাইয়া ও করাইয়া এখন তুমি ধার্ম্মীকের ন্যায় আমাদিগকে ধৰ্ম্মশিক্ষা দিতেছ! তোমার মন—একপ্রকার, কথা
—অন্যপ্রকার ও আচরণ—তৃতীয় প্রকার। এই সব—শঠতা পারিপাট্য (কৌশলমাত্র); তুমি পরিহাস জান, তাহাতে নারীর স সর্ব্বনাশ হয়, অতএব এইসব কপটতা ছাড়। একে বেণুনাদরূপ অমৃত-ঘোল, তাহাতে আবার বাক্যামৃতরূপ মিষ্ট বুলি, তাহাতে আবার অমৃত সমান ভূষণধ্বনি,—এই তিনপ্রকার অমৃত মিলিয়া আমাদের কাণ, মন ও প্রাণ হরণ করিতেছে।